নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল ব্রিটিশ আমল থেকেই। একসময় পাটের ব্যবসার আধিপত্য ছিল নারায়ণগঞ্জে ।
যে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল গড়ে উঠেছিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে।
পাটের ব্যবসার গৌরব ম্লান হতে শুরু করলে নারায়ণগঞ্জে যাত্রা শুরু করে হোসিয়ারি শিল্প।
এ হোসিয়ারি শিল্প থেকেই আজ মসলিন ও পাটের শহরে একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করছে নিটওয়্যার বা তৈরি পোশাক শিল্প।
তবে, পথটা এত সহজ ছিলো না। তৈরি পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঘটলেও, পাট শিল্পের মতো দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোন অবদান রাখতে পারছিলো না।
এ শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির কথা বিবেচনা করে ১৯৯৬ সালে তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীদের নিয়ে একটি সংগঠন করার জন্য
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবং একই সাথে সংগঠনটির প্রধান কার্যক্রম এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই পরিচালনা করার কথাও তিনি বলেন।
পরবর্তীতে বিকেএমইএর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মঞ্জুরুল হক, বর্তমান সভাপতি সেলিম ওসমানসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে তৈরি করেন একটি সংগঠন।
নাম হয় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ‘বিকেএমইএ’।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের দু’টি তলা ভাড়া নিয়ে প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে।
তবে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নারায়ণগঞ্জে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ‘র প্রধান কার্যালয়।
আজ ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ভবনটির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বিকেএমইএ‘র সভাপতি একেএম সেলিম ওসমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর।
পোশাক শিল্পের শ্রম-পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ ২৫বছরের যাত্রায় সংগঠনটির টানা ৭বারের বেশি সময় ধরে নির্বাচিত সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এমপি’র নেতৃত্বে
বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে সংগঠনটি। সরকারের সহযোগীতায় সংগঠনটির নীট শিল্পোদ্যোক্তারা বিশ্বের ১৬২টি দেশে নীট পণ্য রপ্তানি করে আসছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণ কেন্দ্র চাষাঢ়ায় ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ জমির ওপর বিকেএমইএ’র নতুন এই ভবনটি নির্মান করাটা সহজ ছিলো না।
পরে, ২০১০ সালে বিকেএমইএ‘র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান একেএম সেলিম ওসমান।
তাঁর একান্ত চেষ্টা আর বিকেএমইএ‘র পরিচালনা পরিষদের সহযোগীতায় শেষ হয় জটিলতা, সাথে বেড়েছে জমির পরিমানও।
২০১৬ সালে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
১৫ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট এই ভবনটির ৮ তলা পর্যন্ত নিজেস্ব অর্থায়নে ইতোমধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
ভবনটির মোট আয়তন হয়েছে ৫৭ হাজার বর্গফুট।
ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্লোরটি বরাদ্দ করা হয়েছে অফিসের কার্যক্রমের জন্য,
পরের চতুর্থ তলা পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের অফিস রুম,
পঞ্চম তলা সভাকক্ষ এবং অন্যান্য তলার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও বিকেএমইএ‘র আরও দু’টি শাখা কার্যালয় রয়েছে, একটি রাজধানী ঢাকায়, অন্যটি চট্টগ্রামে। এছাড়া কুমিল্লা জেলায় রয়েছে প্রোজেক্ট অফিস।
এদিকে, নতুন ভবনটি নির্মানের পেছনে বিকেএমইএ’র পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের অবদান রয়েছে বলে জানান সেলিম ওসমান।
তিনি বলেন, অনেক বাঁধা, বিপত্তি এড়িয়ে, জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসণ করে চাষাঢ়া মোড়ে বিকেএমইএ‘র প্রধান কার্যালয় স্থায়ী ভাবে করতে পেরেছি।
এর পিছনে অবদান রয়েছে আমাদের আগের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের। তারা জমির সমস্যার সমাধানের জন্য ৩৫ জনে ২ লাখ টাকা করে অনুদান দিয়েছে।
পাশাপাশি বিকেএমইএ‘র উন্নয়নের স্বার্থে গত দুই বার নির্বাচন ছাড়াই আমার উপর তারা আস্থা রাখছে।
করোনার মহামারি চলাকালিন এক বছর বাদে প্রাতি বছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশিই আয় করছে সংগঠনটি।
সংগঠনটির অগ্রগতীর বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় আমরা নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ‘বিকেএমইএ’ করেছিলাম।
এই খাতের অনেক রকমের সমস্যা ছিলো, যা আমরা সমাধান করতে পেরেছি।
সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল শ্রমিক অসন্তোষ, আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি মালিক শ্রমিক এক টেবিলে বসে সমস্যা গুলোর সমাধান করতে।
এবং গত দেড় বছর যাবত কোথাও কোন শ্রমিক অসন্তোষ নেই। ঈদের সময়ও তারা যেন ঠিক মতো বেতন বোনাস পায়।
সেটাও বিকেএমইএ‘র থেকে কন্টোল করা হয়। মালিকার যেন কোন রকম সমস্যা তৈরি না করে শ্রমিকদের সাথে,
সে জন্য কলকারখানা অধিদপ্তর ও শিল্প পুলিশের পাশাপাশি আমাদের টিমও কাজ করে।
তারা কারখানা গুলোর পাশপাশ থেকে গোপন ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে। কারণ শ্রমিকই আমাদের সম্পদ।
সেলিম ওসমান বলেন,
পানি, আগুন ও শ্রমিক; এই তিনটি আমাদের মেইন সম্পদ। পোশাক কারখানার বাকি সকল কিছুই আমদানীকৃত।
আমাদের দেশীয় কোন জিনিষ নাই, যেটা দিয়ে আমরা রপ্তানি করতে পারি।
পাটকে হারিয়ে আমরা নারায়ণগঞ্জকে পোশাক শিল্পের জন্য দাঁড় করাতে পেরেছি।
বিসিককে পোশাক শিল্প নগরীতে দাঁড় করাতে পেরেছি।
আমার বিশ্বাস আগামীতে বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জসহ আশপাশের এলাকাগুলোও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।