কিশোরগঞ্জে ভৈরবে এগারসিন্দুর গোধূলীর সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় জমিয়েছেন আহত ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা।
আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের আশপাশের এলাকা।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারসিন্দুর গোধূলী ট্রেনের সঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়।
দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে।
তবে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ১৭ জনের মরদেহ নেয়া হয়েছে।
আহত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
তাদের মধ্যে অনেককে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। দুর্ঘটনার খবরের পরপরই আহত ও নিহতদের খোঁজে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন স্বজনরা।
ভিড়ের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রমে কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে। পুলিশ চেষ্টা করছে ভিড় কিছুটা কমানোর জন্য।
বাজিতপুর উপজেলার দয়গাঁও বোর্ডবাজার এলাকার রনি জানান, নরসিংদীতে পরিবারসহ ৫ জন টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন।
কয়েক দিন আগে স্ত্রী ও ৪০ দিনের শিশুসন্তানকে নরসিংদী নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়িতে আসেন।
সোমবার নরসিংদী যাওয়ার পথে জগন্নাথপুর এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় তার বাবা নাসির উদ্দীন মারা যান। শিশুসন্তানসহ বাকি চারজন অক্ষত আছেন।
ভৈরব রানিবাজার এলাকার শান্তী রানি শীল জানান,
তার স্বামী সবুজ শীল সোমবার দুপুরে নরসিংদী বালিয়ারচর বৌবাজার এলাকায় মেয়ের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে ট্রেন দুর্ঘটনায় তার স্বামী মারা যান।
ভৈরবের আগানগর এলাকার আরমান হোসেন জানান, তার ভাই আফজাল হোসেন ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স শেষে সাউথ কোরিয়া স্কলারশিপ পেয়েছেন।
এক সপ্তাহ পর চলে যাওয়ার তারিখ ছিল। সোমবার বড় ভাই সাদ্দাম হোসেনের কর্মক্ষেত্র সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাত ৯টায় ফ্লাইট ছিল।
বড় ভাইকে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসার জন্য দুপুরে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। এরই মধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আফজাল হোসেন মারা যান।
ভৈরবপুর গ্রামের রিপা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে রাকিব মিয়া (১৩) শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার একটি পা নেই। সে ট্রেনে উঠে ভিক্ষা করত।
প্রতিদিনের মতো আজও ট্রেনে ভিক্ষা করতে বের হয়। দুর্ঘটনার সময় সে ট্রেনে ছিল।
আমার ছেলে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘরে না ফেরায় ছেলের সন্ধানে ভৈরব হাসপাতালে এসেছি। বেঁচে আছে কি না আমি জানি না।’
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা।
নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা করা হবে।
বিভিন্ন উপজেলা থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স নিয়ে আসা হয়েছে। জেলা প্রশাসন কাজ করছে।