আগামী মাস থেকে শুরু হচ্ছে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা। পাশাপাশি ভারতে ইলিশ রফতানির খবরে দেশের বাজারে ইলিশের দাম এখন আকাশ ছুঁই ছুঁই। এতে চলমান ভরা মৌসুমেও ভোজনরসিক বাঙালির পাতে ইলিশ ওঠা দুষ্কর। বাজারে গিয়ে তাই ইলিশ ছুঁতেও যেন ভয় সাধারণ ভোক্তাদের!
দেশের ইলিশের বাজার এখন অস্থির। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। এরই মধ্যে ভারতে রফতানি করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ যাচ্ছে দেশটিতে। গত ২১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয়।
এর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করতে থাকেন নেটিজেনরা। এ আলোচনা থেমে নেই পথেঘাটে কিংবা হাটেবাজারে। তবে এ সুযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারে আরও বাড়তে শুরু করেছে ইলিশের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রফতানির অনুমতি দেয়ার পর ইলিশ মজুত করতে শুরু করেছেন আড়তদাররা। কেউ মজুত করছেন ভারতে পাঠাতে, কেউ আবার সংকটের সময় বেশি দামে বিক্রির আশায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন,
অনেকেই এখন ইলিশ মজুত করা শুরু করেছেন। সামনে দুর্গাপূজা। আর আগামী মাস থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে ২২ দিনের জন্য। মাছটি মজুতের প্রবণতা শুরু হওয়ায় বাজারে কমছে এর সরবরাহ। ফলে বাড়ছে দাম।
এরই মধ্যে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা ও বাজারজাত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মা ইলিশ রক্ষা করতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বাজারে ইলিশের ঊর্ধ্বমুখী দামে নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা ভোক্তাদের। তারা বলেন, উচ্চমূল্যের কারণে মাছে-ভাতে বাঙালির কাছে বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে এ জাতীয় মাছ। তাই যত দ্রুত সম্ভব বাজারে স্বস্তি ফেরাতে হবে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ কেজি হারে বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়, আর এক কেজি ওজনের ১৭০০-১৮০০ টাকায়। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা হারে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারসংশ্লিষ্টদের দাবি, নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও অভিযানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে ইলিশের বাজার। তা নাহলে সামনের বছরগুলোতে ইলিশ শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
এদিকে, দাম নিয়ন্ত্রণে ইলিশের বাজার ও আড়তগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল জানান, মুনাফার অতি লোভের করুণ চিত্র এখন মাছ বাজারে। সারা দেশে একই অবস্থা। এতে ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ। দাম নিয়ন্ত্রণে ইলিশের বাজার ও আড়তগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে অসাধুদের জরিমানা করা হচ্ছে।
তবে কেনাবেচার রসিদ সংরক্ষণ করা গেলেই এ মাছটি আবারও সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে বলে জানান আব্দুল জব্বার মণ্ডল। তিনি বলেন, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। জেল-জরিমানা করে এসব ঠিক করা যাবে না।