সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে গুলিতে নিহত হয় আহনাফ । তাকে নিয়ে এখন গর্বিত পরিবারের সদস্যরা। তবে আহনাফের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এভাবে তাঁরা গর্বিত হতে চাননি।
রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল আহনাফ। ২০২৫ সালে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে শুরু থেকেই আহনাফ সোচ্চার ছিল। আন্দোলনে অংশ নিয়ে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে আহত হয়ে সে একবার বাসায় ফিরেছিল।
আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে আহনাফ তার মা আর খালাকে বলত, ‘তোমাদের মতো ভিতু মা-খালাদের জন্য ছেলেমেয়েরা আন্দোলনে যেতে পারছে না। ১৯৭১ সালে তোমাদের মতো মা-খালারা থাকলে দেশ আর স্বাধীন হতো না।’
আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী ও খালা নাজিয়া আহমেদ। তাঁরা বলেন, আন্দোলনে যেতে বাধা দিলেই আহনাফ বলত, সে সাঈদ-মুগ্ধ ভাইদের মতো সাহসী হতে চায়। তাঁদের মতো কিছু হলে তাঁরা গর্ব করে বলতে পারবেন, ‘আমরা আহনাফের মা-খালা’। শেষ পর্যন্ত আহনাফ হয়েছেও তাই।
কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আর ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ।
গত বুধবার দুপুরে রাজধানীর মধ্য পাইকপাড়ায় আহনাফের বাসায় কথা হয় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ‘ওই যে ওর গিটার, ওই যে ওর পড়ার টেবিল’—এভাবেই দেখাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। পড়ার টেবিলটি বেশ গুছিয়ে রেখেছিল আহনাফ, তা সেভাবেই আছে।
আহনাফের বাবা নাসির উদ্দিন আহমেদ চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘ছেলেটা চলে গেছে, কিন্তু ঘরে রেখে গেছে অনেক স্মৃতি।’