ব্রিটিশ নথিতে উঠে এসেছে এক তুর্কি ব্যবসায়ীর নাম। একই নথিতে আছে মরক্কো ও কাতার থেকে ইইউ সংসদ সদস্যদের ঘুস নেওয়ার কথাও।
তারপর দেশে বিদেশের নানা অভিজাত পাড়া ঘুরে দুর্নীতির অভিযোগে যুক্ত হয় তুর্কি ব্যবসায়ী হাকান কামুজের নাম।
সম্প্রতি, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যদের ঘুস নেবার আলোচনাতেও জড়িয়েছে তার নাম।
কাবাব শপ থেকে ‘কাতারগেট’, লম্বা পথ, কিন্তু তার মাঝে হাকান রণবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করেন।
তুর্কি ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব নিয়ে পরামর্শও দিতেন তিনি। এক পর্যায়ে, পড়াশোনা শেষ করে তিনি আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন।
এসময়ে তিনি যুক্তরাজ্য ও তুরস্কে বেশ কিছু কোম্পানি চালু করেন, যেগুলির নাম এই ‘কাতারগেট’ দুর্নীতিতে উঠে এসেছে।
কামুজ পরিচালিত একটি সংস্থা, ‘স্টোন হোয়াইট’, ভারত, ইসরায়েল, সিরিয়া, সৌদি আরবের মতো তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বিরুদ্ধে মামলা লড়েছে।
কামুজ বলেন, গত ১০ বছরে অভিবাসন আইন বিষয়ে আমাদের কাজ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছে।
২০২২ সালে ইইউ পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন সদস্য, যেমন ভাইস প্রেসিডেন্ট ইভা কাইলি ও তার সঙ্গী ফ্রাঞ্চেসকো গিওর্গিকে দুর্নীতি,
টাকা আত্মসাৎ করা ও অপরাধচক্রের সাথে যুক্ত থাকার দায়ে ব্রাসেলস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইইউ সংসদ সদস্যদের নগদ টাকা দেবার পাশাপাশি,
বিভিন্ন বিলাসবহুল জায়গায় বেড়ানোর ও থাকার ব্যবস্থা বিনামূল্যে করে দেন কাতার, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার কিছু সরকারি কর্মকর্তারা।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল এতে করে ২০২১ সালে ইইউ’র অন্তর্গত সবক’টি বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজকে ছাড় দেওয়ার পক্ষে ইইউ সংসদদের ভোট টানা।
২০০৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ইইউ সংসদ সদস্য থাকা আন্তোনিও পানজেরি এই ‘কাতারগেট’ চক্রের মাথা বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পানজেরির সাথে গিওর্গির ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে যৌথ কোম্পানিও। এইসব কোম্পানির মাধ্যমেই ঘুসের অর্থ পাচার করা হতো।
পানজেরি ও গিওর্গির বক্তব্য ও কামুজের সাক্ষাৎকার ছাড়াও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পন্থা কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালে জার্মান সংবাদপত্র ডি জ্যুডডয়চেৎসাইটুং ও আইসিআইজে (ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস) বিশ্বের কয়েকটি বড় অফশোর কোম্পানিকে খতিয়ে দেখে।
সেখানে উঠে আসে একটি নাম, রেডিয়ান্ট প্রপার্টিজ, যা নথিভুক্ত আছে যুক্তরাজ্যের দ্বীপ গার্নসিতে।
সেই সংস্থার পরিচালনা করে রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট। প্যারাডাইস পেপার্স বলছে, এই সংস্থার মালিক কাতারের রাজপরিবারের সদস্য খালিদ আল থানি ও তার পুত্র,
তুর্কি আল থানি। খালিদ একইসঙ্গে কাতার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী পরিচালকও।
রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট নামে একই গার্নসি দ্বীপে একটি সংস্থার ট্রাস্টি হাকান কামুজ, কিন্তু এই দুই রেডিয়ান্ট ট্রাস্ট একই সংস্থা কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
যদিও যুক্তরাজ্যের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সেই দেশে আর কোনো সংস্থা নেই এই একই নামে।
কিন্তু কামুজকে খালিদ আল থানির সাথে ঘনিষ্ঠতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি তা এড়িয়ে যান।
কাতারগেট চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের অন্দরে ঢুকে গেছে দুর্নীতি, কালো টাকার লেনদেন ও গোপন ব্যবসায়িক বোঝাপড়া।
এই ঘটনা সামনে আসার পর, ইইউ পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট রোবের্তা মেটসোলা ১৪-দফা প্যাকেজ ঘোষণা করেন দুর্নীতি মোকাবিলায়।
কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি ডিরেক্টর নিকোলাস আইয়োসা মেটসোলার পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন।
তার মতে, ইইউ পার্লামেন্ট সরাসরি কিছু বলছে না এবং ইইউ সংসদ সদস্যরা এত দীর্ঘ সময় ধরে বিচারের বাইরে থেকেছেন যে এখন বদলের কথা কল্পনাও করতে পারছেন না।
দুর্নীতিবিরোধী নীতির প্রথম খসড়া জুলাইয়ের বদলে এখন বেরোবে সেপ্টেম্বরে।
কাতারগেট কাণ্ড সামনে আসার পর কেটে গেছে সাত মাসেরও বেশি সময়।
কিন্তু এখনও ইইউ সংসদে দুর্নীতিবিরোধী কোনো নতুন নীতি প্রণয়ন করা হয়নি।