জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে আসার পর এখনও ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি চীনা অর্থনীতি ।
দেশে ক্রমাগত বাড়ছে বেকারত্বের সংখ্যা।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের যুবক বেকারদের পরিসংখ্যান প্রকাশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে চীন।
এতে বলা হয়, যুব বেকারত্বের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে চীন।
মূলত দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই মাসে চীনের সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে ৫ দশমকি ৩ শতাংশ।
এরপরই চীনা সরকার যুব বেকারত্বের তথ্য প্রকাশ সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোঘণা দেয়।
তবে এই স্থগিতাদেশ কতদিন চলমান থাকবে, সে বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক মুখপাত্র জানান,
আর এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তা ফু লিংহুই বলেন,
‘অর্থনীতি এবং সমাজ ক্রমাগত উন্নয়নশীল এবং পরিবর্তিত হচ্ছে।
পরিসংখ্যানগত কাজেরও ক্রমাগত উন্নতি প্রয়োজন।’
তিনি আরও জানান,
‘চীনে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, যা দেশের বেকারত্বের পরিসংখ্যানকে প্রভাবিত করছে।’
এদিকে দেশে বিদেশি বিনিয়োগে আকর্ষণ বাড়াতে ২৪টি নির্দেশনা দিয়েছে চীনের স্টেট কাউন্সিল।
নির্দেশনায় বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অধিকার রক্ষা করা হবে।
পাশাপাশি তাদের স্বার্থ সুরক্ষা বাড়ানো হবে।
এ জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ অধিকার আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিদেশি বিনিয়োগে পরিচালিত উদ্যোগগুলোকে আরও বেশি রাজস্ব সহায়তা ও কর প্রণোদনা দেয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে স্টেট কাউন্সিল।
এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ করলে অস্থায়ীভাবে আয়কর অব্যাহতি দেয়া হবে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রবাহের জন্য সহজ ও নিরাপদ তথ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছে স্টেট কাউন্সিল।
মূলত আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা ও চীনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে এই প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে আসার পরও ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি চীনের অর্থনীতি।
এখন পর্যন্ত বিদেশি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে বেইজিং।
বুধবার (৯ আগস্ট) এ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।
অর্থনীতির পরিভাষায় যা ‘ডিফ্লেশন’ হিসেবে পরিচিত।
দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাসে দেশটিতে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
এ ছাড়া কমেছে কারখানা ও অন্যান্য ব্যবসার মানও।
পাশাপাশি আবারও সংকট দেখা দিয়েছে চীনের আবাসন খাতে।
চীনে কমেছে খাবার ও গাড়ির দাম। তেমন একটা বৃদ্ধি দেখা যায়নি পোশাক, জুতা ও স্বাস্থ্যসেবায়ও।
২০২২ সালের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে উৎপাদকদের আয় কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক চীন বিভাগের প্রধান এশ্বর প্রসাদ বলেন,
চীনের অর্থনীতি ডিফ্লেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
পাশাপাশি ব্যবসায়িক অবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২১ সালে জাপানের ভোক্তা মূল্যসূচক কমেছিল। এরপর এ অবস্থায় পড়ল চীন।
জি-২০-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল চীনই এখন এ পরিস্থিতির শিকার।
গত জুলাইতে দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তা ফু লিংহুই জানিয়েছিলেন, ‘চীনে কোনো মূল্যস্ফীতি নেই, ভবিষ্যতেও হবে না।’
এদিকে বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে চীনের রফতানির পরিমাণ কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির আগে এত কম রফতানি হার আর দেখা যায়নি।
রফতানির পাশাপাশি দেশটিতে আমদানির চাহিদাও কমে এসেছে। জুলাইয়ে আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।
চীনা প্রতিষ্ঠান পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝেং ঝিইউ বলেন, মূলত দেশের বাজারে পণ্যের চাহিদা আগের তুলনায় কমে এসেছে।
এ কারণে আমদানির পরিমাণও কমছে।
চীনা রাজস্ব বিভাগের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, টানা পাঁচ মাস ধরে ডলারে আমদানির পরিমাণ কমেছে চীনে।
যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি বছর ঘুরে দাঁড়াবে চীনা অর্থনীতি, কিন্তু বাস্তবে এখনও আশার আলো দেখাতে পারছে না দেশটি।
তবে দেশটির অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীন ভবিষ্যৎ অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
বিশেষ করে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল ও সৌদি থেকে ইউয়ানে জ্বালানি কিনে পরবর্তী সময়ে বড় অর্থনৈতিক সূচকের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে চীন।
এদিকে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মান আগস্টে আরও হ্রাস পেয়েছে।
এটিকে ভালো লক্ষণ উল্লেখ করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক কেন চিয়ুং বলেন, ‘দুর্বল মুদ্রা রফতানির জন্য সুবিধাজনক।’
এতে অন্যরা ইউয়ানে ব্যবসা করতে আরও উৎসাহী হবে।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউয়ানের সর্বজনীন ব্যবহার বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।