মুদ্রার দুর্বল অবস্থানই সুফল বয়ে এনেছে জাপানের অর্থনীতির জন্য।
গত প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে দেশটির অর্থনীতিতে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
কারণ, জাপানি মুদ্রার দুর্বল অবস্থানের ফলে দেশটির রফতানি বেড়ে গেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত প্রান্তিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এই অর্থনীতির বার্ষিক মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ৬ শতাংশ বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদদের সব পূর্বাভাসকে যা ছাড়িয়ে গেছে।
এমনকি তারা জাপানের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে অনুমান করছিলেন, বাস্তবে দেশটির প্রবৃদ্ধি তার থেকে প্রায় দ্বিগুণ।
ফলে বিগত প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রবৃদ্ধি দেখল জাপানের অর্থনীতি।
মূলত জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দুর্বল অবস্থানই অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
ইয়েনের মান কম থাকায় জাপানি পণ্য তুলনামূলক সস্তায় কিনেছেন বিশ্বের ক্রেতারা।
ফলে গত প্রান্তিকে রফতানি বেড়ে গেছে।
টয়োটা, হোন্ডা এবং নিশানসহ দেশের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যের রফতানি চাহিদা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বাড়ায় তাদের মুনাফাও বেড়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় মার্কিন ডলারসহ অন্য প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ইয়েনের মানের ব্যাপক পতন হয়েছে।
এ বিষয়ে ফুজিৎসুর প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন শুলজ বিবিসিকে বলেছেন,
জিডিপির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মূলত ইয়েনের দুর্বল অবস্থান।
যদিও একটি দেশের মুদ্রার দুর্বল অবস্থান দেশটির বাজারে আমদানি করা পণ্য ব্যয়বহুল করে তোলে,
তবে গত কয়েক মাসে বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের মতো পণ্যের দাম নিম্নমুখী রয়েছে।
ফলে আমদানি করা পণ্যের মূল্যও কমেছে।
বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তুলনায় গত প্রান্তিকে দেশটির আমদানি ব্যয় কমেছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ,
যা জিডিপির ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির জন্য বড় অবদান রেখেছে বলে মনে করেন ইওয়াই এর নোবুকো কোবায়াশি।
এদিকে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য দেশটির পর্যটন খাতেরও ভূমিকা রয়েছে।
এপ্রিলের শেষের দিকে জাপান সরকার সীমান্তে বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর দেশটিতে পর্যটকদের সমাগম বাড়তে থাকে।
জাপানের জাতীয় পর্যটন কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, জুন পর্যন্ত সময়ে জাপানের বিদেশি দর্শনার্থীদের সংখ্যা মহামারি করোনা শুরুর আগে যেমনটা ছিল তার ৭০ শতাংশেরও বেশি পুনরুদ্ধার করেছে।
তা ছাড়া দেশে আসা পর্যটকদের কেনাকাটার প্রভাব জাপানের অর্থনীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চীনের গ্রুপ ট্রাভেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার প্রভাবও পড়বে জাপানের অর্থনীতিতে।
কেননা, করোনা মহামারির আগে জাপানে আসা পর্যটকের মধ্যে কেনাকাটায় অর্থ ব্যয় করা দর্শনার্থীর এক-তৃতীয়াংশই চীনা পর্যটক।
প্রসঙ্গত, কোনো দেশের অর্থনীতি কতটা ভালো বা খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে তা বোঝার জন্য জিডিপি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারগুলোর মধ্যে একটি।
এর মাধ্যমেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারে কখন প্রতিষ্ঠান প্রসারিত করতে হবে এবং আরও জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
একই সঙ্গে এটি সরকারকে ট্যাক্সের হার ও খরচ নির্ধারণে সাহায্য করে।