ইদানীং সব বাসায়ই বাথরুমে টয়লেট গোসলের ব্যবস্থা এক সঙ্গে থাকে। এখন প্রশ্ন আসে এমন স্থানে অজু করা জায়েজ হবে? আর যদি অজু করা জায়েজ হয়- তাহলে অজুর দোয়া পড়া যাবে?
ইসলামি শরিয়তের আদব হলো, টয়লেট ও বাথরুম আলাদা রাখা। বাথরুম মানে গোসল খানা। সম্ভব হলে অজুর জন্য বাথরুমের বাইরে একটি স্বতন্ত্র জায়গা রাখা। নিজে ইচ্ছা করে এমন ডিজাইনে ঘরবাড়ি তৈরি করতে পারলে সম্ভব। ভাড়া বাসায় এমন আলাদা আলাদা পাওয়া সম্ভব নয়।
যদি টয়লেট ও বাথরুমের মাঝে কোনো আড় বা পর্দা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে নির্দিষ্ট কমোড ও পা-দানি অংশটি ছাড়া বাকি বাথরুমটি গোসলখানা হিসাবে ধরে নিতে হবে। নাপাকি থেকে পূর্ণ সতর্ক হয়ে সেখানে বসে অজু বানাতে পারবে। অপারগ অবস্থায় সীমিত সুযোগেও মহান আল্লাহ বান্দার নিয়তের দিক বিবেচনা করে বহু সীমাবদ্ধতা ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন। আশা করা যায় মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন।
অজুর শুরু ও শেষে দোয়ার শিক্ষা রয়েছে হাদিসে। অজুর শুরুতে بِسْمِ ٱللَّٰهِ ‘বিসমিল্লাহ’ বলা সুন্নত ও ফজিলতপূর্ণ আমল। কিন্তু টয়লেটে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ। কেননা টয়লেট নাপাক স্থান। ওখানে দোয়া-দরুদ, জিকির ইত্যাদি মহান আল্লাহর শান ও মর্যাদার পরিপন্থী। (দেখুন ইবনে মাজাহ: ৩০৩, সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৪১৩, মুসনাদে আবু ইয়ালা আলমুসিলি: ৩৫৪৩)
তাই আলেমদের পরামর্শ হলো- টয়লেট ও গোসলখানা একসঙ্গে হলে, দ্রুত আড়ালের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ টয়লেট ও গোসলখানার মাঝখানে পার্টিশন দেওয়া। এতে অজুর দোয়া পড়তে সমস্যা থাকে না, উপরন্তু আল্লাহর নামের মর্যাদা ও পবিত্রতাও রক্ষা হয়। কিন্তু পার্টিশন না থাকলে জায়গা যতবড়ই হোক না কেন, বাথরুম টয়লেটের বাইরের অংশ বিবেচিত হয় না। ফলে ওখানে যেকোনো জায়গায় আল্লাহর নাম নেওয়ার অর্থই হলো টয়লেটে আল্লাহর নাম নেওয়া। তাই আড়াল বা পার্টিশনের ব্যবস্থা করা উত্তম।
তবে, তা করতে না পারলে অজু শুদ্ধ হবে। মূলত দোয়া বা জিকিরের জন্য জায়গা পাক করে নেওয়াটাই দায়িত্ব। ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, বাথরুমে যদি বেশি পরিমাণ পানি ঢালা হয়, যার ফলে সেখান থেকে নাপাকি দূর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় তাহলে এর দ্বারা উক্ত এলাকা পাক হয়ে যাবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/৩৩৩)
তখন সেখানে অজু গোসল, দোয়া সবকিছু জায়েজ। যেমন রসুলুল্লাহ (সা.) এক বেদুঈনের মসজিদে প্রস্রাব করার ফলে তাতে পানি ঢালার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারি: ২১৯)
তবে সর্তকতা হচ্ছে, টয়লেট, বাথরুমের মাঝখানে পর্দার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আল্লাহর নামটা মর্যাদার খাতিরে মুখে না নিয়ে মনে মনে নেওয়াকে উত্তম বলেছেন অনেক আলেম। কেউ কেউ বলেছেন, যদি সম্ভব হয় অন্তত অজুর শুরুর অংশটি বাথরুমের বাইরে সম্পন্ন করতে পারলে ভালো।
কারণ আল্লাহর নাম নিতে হয় অজুর শুরুতে। আর বর্তমানের এটাচট বাথরুমগুলোতে মাঝখানে সাধারণত দেয়াল থাকে না, তাই এসব বাথরুমে অযু করার সময় মুখে উচ্চারণ করে দোয়া না করা। তবে মনে মনে দোয়া করা যাবে।