গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পাঁচটার দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শুরু হয়। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে শেষ হয় আলোচনা সভা। ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এ আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ৩০টির বেশি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বৈঠকের ভেতরে ‍আলোচিত বক্তব্য, সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা করেছে। গত সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আলোচনা শুরু হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে উপস্থিত দলগুলোকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আমি সারাদিনে যত মিটিং করি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই যখন আপনাদের সঙ্গে এরকম বসার সুযোগ পাই, আলাপ করার সুযোগ পাই।’

‘কারণ এখানেই সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃত ভবিষ্যৎ রচনা করা হচ্ছে। এটা আমাকে শিহরণ জাগায় যে এরকম একটা কাজে আমি জড়িত হতে পেরেছি, নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছি। আপনাদের কথা শোনার জন্য এটা কীভাবে আপনারা গাইড করবেন কোথায় নিয়ে যাবেন,’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সংস্কার করার জন্য। আমরা বুঝতে পারছিলাম না কোথা দিয়ে শুরু করি। প্রথমে আলাপের মধ্যে নানা আলাপ নানা প্রসঙ্গে ঠিক হলো যে আমরা কিছু কমিশন করব, যেগুলো দ্বারা প্রকৃতপক্ষে ভেতরে গিয়ে জিনিসটা তৈরি করবে।’
এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। শেষ পর্যন্ত আমরা কমিশন করলাম। প্রথমে ৬টা কমিশন, পরবর্তীতে আরও ৬টা। তাদের ৯০ দিন সময় দিয়েছিলাম,’ বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত যে তারা করতে পেরেছে। কিছু কমিশন বেশি সময় নিয়েছে, তাতে কোনো অসুবিধা নাই। কমিশনের রিপোর্ট এলো। এরপরে আমরা যে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করতে চাচ্ছি, সেটা কীভাবে হবে? সেটা থেকে একটা আইডিয়া এলো যে একটা ঐকমত্য কমিশন বলে আলাদা একটা কমিশন করার।’

ডা. ইউনূস বলেন, প্রফেসর আলী রিয়াজ যখনই আমার সঙ্গে বৈঠক করেন আমি অত্যন্ত আনন্দিত হই। যেভাবে আপনারা সহযোগিতা করেছেন আনন্দ সহকারে পার্টিসিপেট করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘দ্বিতীয় পর্বে কী হবে, আমি আলী রিয়াজের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। অনেকগুলো বিষয় আছে কাছাকাছি এসে গেছি, আরেকটু হলে আমাদের তালিকাতে আরেকটা সুপারিশ যুক্ত হয়, এই সুযোগ যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি।’

এছাড়াও বলেন, ‘এই দ্বিতীয় পর্বের আলাপটা হলো, যেটুকু দূরত্ব ছিল সেটাকে ঘুচিয়ে এনে যেন আমাদের জুলাই সনদে বর্তমানে যতগুলো ঐকমত্যের বিষয় আছে, তার মধ্যে যে আরও কিছু যোগ করতে পারি, জাতীয় একটা সনদ হলো। অনেকগুলো বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি।’

‘জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত যে, আমরা এরকম বিভক্তিকরণের প্রক্রিয়ার রাজনীতি সৃষ্টি করিনি। আমরা সৃষ্টি করেছি জাতীয় ঐকমত্য  গড়ে তোলার জন্য, দেশের উন্নতির জন্য, দেশের মঙ্গলের জন্য। আশা করি আমরা সেই পর্বে ঢুকতে পারব এবং অত্যন্ত চমৎকার একটা জুলাই সনদ তৈরি করতে পারব,’

আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘…এ দেশের মানুষ উপদেষ্টামণ্ডলীর কাছে নিরপেক্ষ আচরণ আশা করে। সেটা আপনাকে দেখতে হবে। আমরা যে শুধু শুধু কমপ্লেইনের বাস্কেট খুলে আপনার কাছে যাই, তা নয়; সেটা আপনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য যাই।…দয়া করে সবকিছু বিবেচনা করে কালবিলম্ব না করে একটা রোডম্যাপ দেবেন ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচনের জন্য, সেটা আমাদের দাবি। আর যদি কোনো যুক্তি থাকে, তাহলে সেটা জাতির কাছে উপস্থাপন করবেন।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই আলোচনা রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলে, তা দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।