ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেন। মাঝে কেটে গেছে ১২ বছর। কানায় কানায় পূর্ণ গ্যালারি থেকে সমর্থকদের থেকে স্বাগত পেয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন নেইমার জুনিয়র। স্মৃতি রোমন্থন করে জানান, নিজেকে আবার সান্তোসের সে ১৭-১৮ বছরের তরুণ ফুটবলার মনে হচ্ছে। শৈশবের ক্লাব থেকে নিজেকে নতুন করে তৈরি করে ফিরতে চান জাতীয় দলে। ২০২৬ বিশ্বকাপ আলো ছড়াতে করতে চান সাধ্যের সবটুকু।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সান্তোসের স্টেডিয়ামে সমর্থকদের সামনে উপস্থাপন করা হয় নেইমারকে। ২০১৩ সালে এ প্রাঙ্গন ছেড়ে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানে চার মৌসুম দ্যুতি ছড়িয়ে দলবদলের বিশ্বরেকর্ড গড়ে যোগ দেন ফরাসি ক্লাব পিএজিতে। সেখানে ছিলেন আরও ছয় মৌসুম।
সব মিলিয়ে ইউরোপে ১০ বছরের যাত্রা শেষ করে তিনি ২০২৩ সালে যোগ দেন সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলালে। তবে এ যাত্রাটা সুখকর ছিল না তার জন্যে। ইনজুরির কারণে বেশিরভাগ সময়-ই তাকে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। সেখানে ১৮ মাসে খেলতে পেরেছেন মাত্র ৭ ম্যাচ। ইনজুরি প্রবণতার কারণে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নেইমারকে ছেড়ে দেয় আল-হিলাল। তবে সান্তোসে ফিরে নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করতে চান নেইমার। যেন জাতীয় দলে ফিরে পরিকল্পনা সাজাতে পারেন ২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে।
নেইমার বলেন, ‘অবশ্যই, আমি জাতীয় দল আমি ফিরতে চাই। আমার এখনো কিছু অর্জন করার আছে (বিশ্বকাপ)। এটা আমার শেষ মিশন। তাই আমি এটার জন্যই ছুটতে চাই, যাই হোক না কেন।’
এর আগে ১২ বছরের পর শৈশবের ক্লাবে ফিরে আবেগী হয়ে পড়েন নেইমার। তার চোখ দিয়ে ঝরে অশ্রু। নেইমার বলেন, ‘আমি এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যার কিছু ফুটবলের যুক্তিতে ভুল ছিল এবং কিছু কার্যকরী ছিল। জানুয়ারিতেও আমি আল-হিলাল ছাড়ার কথা বা সান্তোসে ফেরার কথা কল্পনা করিনি। আমি খেলার জন্য সত্যি উদগ্রীব ছিলাম এবং আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। (সান্তোসে) ফিরে আসার সুযোগ পেয়ে আমি দ্বিতীয়বার চিন্তা করিনি। আমি বাবাকে বলে দিয়েছিলাম, আমি সান্তোসে ফিরতে চাই এবং সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই হলো। আমি, আমার পরিবার এবং আমার বন্ধুরা; সবাই খুশি। আমি ফিরেছি, নতুন শক্তি নিয়ে।’
উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সংবাদ সম্মেলনে ৩২ বছর বয়সি নেইমার জানান, সান্তোসে ফিরে নিজেকে ১৭-১৮ বছরের তরুণ মনে হচ্ছে। ১২ বছর আগে যে বয়সটায় খেলেছেন ব্রাজিলের ক্লাবটির হয়ে। সান্তোসের হয়ে প্রথম দফায় ২২৫ ম্যাচ খেলে ১৩৬ গোলের পাশাপাশি ৬৪ অ্যাসিস্ট করেছিলেন নেইমার। ৫০ বছরের ইতিহাসে ক্লাবকে প্রথমবার কোপা লিবারতাদোরেসের শিরোপা জিততে সহযোগিতা করেছিলেন তিনি।সে সময়কার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে তাকে দলে ভিড়িয়েছিল বার্সা।
এক যুগ পর সান্তোসে আবার ফিরতে পেরে পুনরুজ্জীবিত ও খুশি জানিয়ে নেইমার বলেন, ‘মানসিকভাবে আমি অনেক খুশি, পুনরুজ্জীবিত। যখন এখানে পা রাখি আমি সে আকর্ষণবোধ করছিলাম। এটা আমাকে নিয়ে গিয়েছে আমার ১৭, ১৮ বা ১৯ বছর বয়সে। আমি আবার তরুণ হয়ে গেছি। আমি এখানে পরিপক্ক মানুষ হিসেবে ফিরেছি, সঙ্গে সুন্দর একটি পরিবার নিয়ে এসেছি। সুতরাং আমি এখন ভিন্ন। কিন্তু অবশ্যই আগের মতো জয়ের মানসিকতা এবং একই শিশুশুলভ মানসিকতা নিয়ে এসেছি। আমি এখানে সুখী হতে এসেছি। এখানকার সমর্থকদের আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। সান্তোসের চেয়ে ভালো ম্যাচ আর কেউ হতে পারে না।’
সান্তোসের সঙ্গে নেইমারের চুক্তিটা অবশ্য স্বল্প সময়ের। মাত্র ৬ মাসের চুক্তিতে শৈশবের ক্লাবে ফিরেছেন এ তারকা। এরপর কি আবার ইউরোপ বা অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে আছে তার?
জবাবে নেইমার বলেন, ‘এটা নিয়ে এখন কথা বলা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। সান্তোস আমাকে ফেরার সুযোগ দিয়েছে। অবশ্যই আমি অনেক কিছু ছেড়ে এখানে এসেছি। কারণ এটা আমার জন্য যথাযথ ছিল। ৬ মাস শেষে চুক্তি বাড়তেও পারে। আমরা জানি না, কাল কি হবে। দুই সপ্তাহ আগেও আমি এখানে থাকব জানতাম না। আমি এখানে ফিরেছি খেলার জন্য, খুশি থাকার জন্য, গোল করার জন্য এবং সান্তোসকে সহায়তা করার জন্য।’
১০ নম্বরের জার্সিতে সান্তোসের হয়ে কবে মাঠে নামবেন নেইমার? ইনজুরির ধকল সারিয়ে এখন কতটা ফিট এ তারকা?
ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বলেন, ‘শারীরিকভাবে আমি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। তবে এখনো শতভাগ ফিট নই। আমার ম্যাচে নামতে হবে, খেলতে হবে। শুধু অনুশীলন করে শ্যাপে আসা যাবে না। যখন আবার খেলতে নামব, তখন আরও ভালো থাকব। আল হিলালের হয়ে অনুশীলন করার সময় আমি ভালো অনুভব করেছি।’
ইনজুরিতে এক বছরের জন্য ছিটকে যাওয়ার পর ফিরে এসে আল-হিলালের হয়ে মাত্র দুই ম্যাচ খেলেছিলেন নেইমার। সান্তোসে অবশ্য ম্যাচ পাওয়া নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তিনি। আপাতত অপেক্ষাটা নিবন্ধনের।