শহরে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে এবং পুলিশের ইমার্জেন্সি হর্ন ব্যবহার করে বেপরোয়ারা গতিতে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছিলো বাহাউদ্দিন বাবুল। এসময় সড়কে থাকা অন্যান্য গাড়ীগুলোকে সাইড না দিয়ে নিজের মতো করে যাচ্ছিলেন তিনি। এর ফলে পুরো সড়ক জুড়ে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়। ঠিক এই সময়ে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক যুগের চিন্তার স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক সুলতানের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে ওভারটেক করে যাওয়ার সময় জোরে হর্ণ বাজালে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী তার গাড়ীটি আটক করে। এসময় তিনি নিজেকে একজন ফিল্ম ডিরেক্টর পরিচয় দেয় এবং তার এই গাড়ীটি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বলে দাবি করে সেখানে থাকা এলাকাবাসীর ওপর চরাও হন।
গতকাল বিকেলে গলাচিপা এলাকায় সাংবাদিক সুলতানের মহদেহের গাড়ী নিয়ে প্রবেশ করলে পিছন থেকে বারবার ইমার্জেন্সি হর্ণ দিতে থাকে পুলিশের স্টিকার সাটানো এই প্রাইভেট গাড়িটি। এর আগে এলাকার সড়কের মধ্যে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্স গাড়িটিও বেশ কিছুক্ষণ থামিয়ে রাখে এই গাড়ীর চালক। তার কারণে এলাকায় যানজট সৃষ্টিও হয়ে যায়। পরে গাড়িতে থাকা চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে এলাকাবাসী তাকে থামালে সে জানায়, এটা পুলিশের গাড়ি যেভাবে মনে চায় চালাবো! কোনো বাপের বেটা আছে কিছু বলবো! তারপরেও এলাকাবাসী ভদ্র ব্যবহার করে ছেড়ে দেয়। কারণ, যেহেতু একটা মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে, সেই বিবেচনায় তার সাথে তর্কে জড়ায় নেই কেউ। কিন্তু সে কিছুক্ষণ পরই গাড়ি রেখে কিছু লোক সাথে নিয়ে আসে! আর স্থানীয় কারা কারা গাড়ি থামিয়েছিল পরিচয় জানতে চায় এবং পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দেন। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তার পরিচয় জানতে চাইলে তাদের সাথেও তর্ক করেন তিনি। বলেন, উনি পুলিশ হেড কোয়াটারের লোক। সাংবাদিকদের বড়টা আছে!
সূত্রানুসারে, ২০২০ সালে এই গাড়ীর চালক বাহাউদ্দিন বাবুল এবং তার এক সহযোগীকে বিলাসবহুল গাড়িসহ ৪০ কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ এর সদস্যরা। এ সময় মাদকের চালান আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ঐ জিপ গাড়িতে পুলিশ লেখা স্টিকার ছিল। ভেতরে এক নারী পুলিশ সদস্যের আইডি কার্ডও পাওয়া যায়।তৎকালীন সময় র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেন। সে সময় তাদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় মামলা র্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে কোন এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় মাদকের গডফাদার বাহাউদ্দিন বাবুল জামিনে বের হয়ে আসেন।
অনুসন্ধান বলছে, এই গাড়ীর চালক ও বিগত সময় র্যাবের হাতে আটক হওয়া বাহাউদ্দিন বাবুল দুইজন একই ব্যক্তি। এই বাবুল ফতুল্লার হরিহরপাড়া আমতলা এলাকার বাসিন্দা। তার স্ত্রী বিলকিস আক্তার মিতু মহিলা পুলিশ সদস্য। আর বিলকিস আক্তার মিতুর বদৌলতে বাহাউদ্দিন বাবুল তার বিলাস বহুল জিপ গাড়ীতে পুলিশ ষ্টিকার লগু লাগিয়ে মাদকের চালান বিভিন্ন স্থান থেকে অণ্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। তৎকালীন সময়ে র্যাব-১ এর দায়েরকৃত মাদক মামলা থেকে জামিনে বের হয়ে আসার পর পরই বাহাউদ্দিন বাবুল আবারো সেই পূর্বের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন এমনটাই স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। প্রতিদিন তার বর্তমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিনিষ্টার শো-রুমের ভিতরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের আনা গোনা লক্ষ্য করা যায়। এমনকি পুলিশ ষ্টিকার লাগানো গাড়ীতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের হর হামেশাই বিচরন করতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ ষ্টিকার লাগানো বিলাস বহুল গাড়ীতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরে চলা ফেরার কারনে একদিকে সাধারন মানুষের কাছে গর্বিত পুলিশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে অপরদিকে পুলিশের লগো ব্যবহার করে মাদক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ হাছিল হলেও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে গর্বিত পুলিশের ভাবমূতি! তবে স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে, প্রকাশ্যে একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী দীর্ঘদীন ধরে পুলিশের ভাবমূতি নষ্ট করে গেলেও কি কারনে কোন ব্যববস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন?
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যূষ কুমার মজুমদার বলেন, আপনাদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করে খুব দ্রুত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনয়ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নবান্ন টিভি/ সুমন ইসলাম