ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখানোসহ মানসিক নির্যাতনের একাধিক অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে।
শিক্ষক মনির রাতের বেলায় দীর্ঘদিন ধরে নিজ বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের ভিডিও কল ও মেসেজ দিয়ে অশালীন ভিডিও পাঠাতেন। এই সংক্রান্ত বেশকিছু স্ক্রিনশট সময় সংবাদের হাতে এসেছে। এ নিয়ে বিভাগে অভিযোগও দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, কারুশিল্প ডিসিপ্লিনে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে প্রত্যেক ব্যাচের সকল ব্যবহারিক ক্লাস ও মার্কিংয়ের দায়িত্ব একাই পালন করেন মনির উদ্দিন আহমেদ। ফলে বিভাগে তিনি একনায়কতন্ত্র কায়েম করে শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর হুমকি দেন। ক্লাসের সবার সামনে একাধিক নারী শিক্ষার্থীদের গায়ে আপত্তিকর স্থানে হাত দেয়ার চেষ্টা করতেন এবং অপ্রয়োজনে রাত-বিরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও কল ও যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করে বার্তা পাঠাতেন।
বিবাহিত শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যক্তিগত জীবনের আলাপ, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের বিস্তারিত জানতে চেয়ে অশ্লীল বিভিন্ন বিষয় টেনে আনতেন।
এছাড়াও পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব জানান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।
তিনি এক নারী শিক্ষার্থীকে রাতের এক বার্তায় লিখেছেন, ‘ঘুম নেই, একদম ফেইল করাই দিমু।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হই তখন তার টার্গেটের শিকার হই। তিনি বিভিন্ন সময় আমাকে ফোন করে ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন। জ্বর দেখার নাম করে হাতে, কপালে, মুখে, গলায় হাত দিতেন। প্রায়ই হাত দেখতে চাইতেন তিনি। আমি কারো সঙ্গে সম্পর্ক করেছি কিনা জানতে চেয়ে বিরক্ত করতেন। আমি এই বাজে মানুষটার কঠিন শাস্তি চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘উনি ক্লাসে প্রায়ই ডাবল মিনিং কথাবার্তা বলতেন। ক্লাসে এসে তিনি বলেন, মেয়েরা কলা বেশি করে খাবে, ছেলেরা কলা খাবে না।’ এছাড়াও তিনি বলতেন, ‘আমার তিনটা পা আছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ড. মনির উদ্দিনকে একাধিকবার কয়েকটি নাম্বার থেকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সম্প্রতি আমার কাছে ড. মনির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অনেক বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিয়েছে এবং তার বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে। বিভাগের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমি সেদিন বিকেলেই জরুরি একাডেমিক কমিটির মিটিং কল করি। সেখানে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। মিটিংয়ে কমিটির সবার পরামর্শে তাকে বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’