ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসছে ১৯টি অস্থায়ী পশুর হাট। খামারিরা ট্রাকভর্তি গরু নিয়ে এসে জমিয়ে দিয়েছেন হাট। এবার হাটে নেই ভারতীয় গরু, ক্রেতারা অপেক্ষায় দাম যাচাই করতে।
এখনো ঈদের ৮ দিন বাকি থাকতে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খামারিরা ট্রাকভর্তি গরু নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাচ্ছেন। যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া, দনিয়া কলেজ মাঠ এবং ছনটেকখালী এলাকায় হাটের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। বিক্রেতারা গরুর শেড তৈরি করছেন বাঁশ এবং ত্রিপল দিয়ে, যাতে পশুদের বৃষ্টি এবং ঝড় থেকে সুরক্ষা দেওয়া যায়।
কুষ্টিয়ার খামারি মোহাম্মদ টিটু জানান, “আমি ৫০টি গরু এনেছি। বৃষ্টি দেখে আগেভাগে চলে এসেছি। তবে এখনো দাম নিয়ে আলোচনা চলছে। বিক্রি শুরু হলে বাজার কীভাবে চলবে সেটা দেখা যাবে”। গ্রামে হাট জমে ঈদের এক সপ্তাহ আগে, তবে শহরে জমে দুই-তিন দিন আগে।”
আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। হাটে পশু আসছে, ক্রেতারা দরদাম করছেন। বেচাকেনা হচ্ছে না খুব একটা। হাটের ভেতরে বড় বড় গরুর শেডগুলির সামনে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা গরু দেখে ছবি তুলছেন এবং ভিডিও করছেন, তবে বিক্রির পরিমাণ তেমন বাড়েনি। হাটের পরিবেশ অনেকটা এক্সপেরিয়েন্স বা তাজা দৃশ্য দেখার মতো হয়ে উঠেছে, কিন্তু ক্রেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কম। এই পরিস্থিতি অনেক বিক্রেতাকেই উদ্বিগ্ন করেছে, তারা আশাবাদী, পরবর্তী কয়েকদিনে বিক্রি আরো বাড়বে।
ঢাকার কোরবানির পশুর হাটে দাম বৃদ্ধি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, গরুর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং হাটের অব্যবস্থাপনার কারণে বিক্রির পরিবেশ অনুকূল নয়।
হাটে আসা ক্রেতারা জানিয়েছেন, পশু দেখে দরদামের ধারণা নিচ্ছেন। সাব্বির হোসেন নামে এক ক্রেতা, জানান, “গরু কিনবো ভেবেই এসেছি। সাত বন্ধু মিলে গরু কোরবানি করবো। আমাদের বাজেট আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু যেটা পছন্দ হচ্ছে, সেটা দামের নাগালেই নেই। আর যেটা বাজেটের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, সেটা পছন্দ হচ্ছে না।”
এছাড়া, অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন যে গরুর ওজন এবং সাইজ অনুযায়ী দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। গরু দেখলে মন চাইবে কিনতে, কিন্তু টাকার সাইজ ও ওজন অনুযায়ী দাম খুব বেশি হাঁকানো হচ্ছে। তাই অনেক ক্রেতার একই অবস্থা, দাম আর মান মেলাতে পারছেন না। তারা মনে করছেন, ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ানোর জন্য এই বাড়তি দাম একটি অযৌক্তিক প্রক্রিয়া।
এছাড়া, হাটে অব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশের সমস্যা নিয়ে অনেক ক্রেতা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। হাটের ইজারাদার জানান, “এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে, তবে আমরা আশা করছি, ঈদের আগেই হাটের পরিবেশ ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু ক্রেতাদের কিছু অসুবিধা হচ্ছে, যেমন পার্কিং ব্যবস্থা এবং কিছু জায়গায় পানি নিষ্কাশনের সমস্যা।”
বৃষ্টির কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও, হাট কর্তৃপক্ষ তাদের মাটি শুকনো রাখতে এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা কার্যকর করার চেষ্টা করছে। তারিকুল ইসলাম তরিক বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যেন ক্রেতারা আর বিক্রেতারা কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই হাটে আসতে এবং নিরাপদভাবে বেচাকেনা করতে পারেন।”
ভালো দাম পাওয়ার আশা নিয়ে বিক্রেতারা তাদের গরু নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন। তারা আশা করছেন, ঈদের আগে হাটের পরিবেশ আরও ভালো হবে এবং দামদামির মাধ্যমে ক্রেতারা তাদের পছন্দের গরু কিনতে পারবেন।
হাটের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে কিছুটা উদ্বেগ থাকলেও, বিক্রেতারা এবং ক্রেতারা উভয়ই আশা করছেন যে ঈদের আগের কয়েকদিনে বাজার জমে উঠবে এবং সব কিছু সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে। যদিও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে, তবে আশা করা হচ্ছে, ঈদুল আজহার আগে সকল বিষয় সম্পূর্ণভাবে সমাধান হবে।