আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে অভিযোগ দাখিল করেন , বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ । তিনি গুম হওয়ার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন ।তাজুল ইসলামের কাছে শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজের গুমের অভিযোগ জমা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাঁদের নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসান, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক,পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন। সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। এছাড়াও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে গুম করেছিলো।
তখন সালাহউদ্দিন বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রায় দুই মাস পর ১১ মে ২০১৫ ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাঁকে আটক করা হয়।
বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতের নিম্ন আদালতে ২০১৫ সালের ২২ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। সালাহউদ্দিন এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাঁকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান তিঁনি। এরপর তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরে তিঁনি ৮ মে ভ্রমণ অনুমোদনের আবেদন করেন আসাম রাজ্য সরকারের কাছে । আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তাঁর বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাঁকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। তিঁনি ১১ আগস্ট দেশে ফেরেন।
নিজের গুম হওয়া প্রসঙ্গে তিঁনি বলেন, ‘আমি আগেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকে গুম কমিশনে এসেছি। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিরা আমাকে তুলে নিয়ে যায়। তার ৬১ দিনের মাথায় আরেকটি দেশে পাচার করে তারা। এ সময়ের মধ্যে আমাকে যে রুমে রেখেছিল, সেই রুমের বর্ণনাসহ নানা বিষয় আমি গুম কমিশনের কাছে বলেছি।’
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ তুলে দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নিজের গুম হওয়া ছাড়াও বিএনপি নেতাকর্মীসহ অন্য যারা গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের আহ্বান জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।
অভিযোগ জমা দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুম, খুনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হবে।’ তবে এখনো এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা না যাওয়ায় ক্ষোভ জানান তিঁনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গুম-খুনে জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তিঁনি।
এ সময় বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল,ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাবুসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।