বাংলাদেশ ও এর আশপাশে গত সাড়ে আট মাসে ৩১টি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে সাতটি ভূমিকম্পের উৎপত্তি দেশে সীমারেখায় ও অভ্যন্তরে হয়েছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ভূমিকম্প হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
বিভিন্ন সময় হওয়া ছোট ছোট ভূমিকম্পগুলো বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন জায়গায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪.২।
হালকা মাত্রার এই ভূমিকম্প হয় দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডে।
এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে (উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে)।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এবং ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়াৎ কবীর গণমাধ্যমকে বলেন,
ভূমিকম্পটির উৎপত্তি টাঙ্গাইল শহরের আশপাশে হতে পারে।
তবে ভারতের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইসমোলজি জানিয়েছে,
ভূমিকম্পটির উৎপত্তি টাঙ্গাইলের সখিপুরে। সংস্থাটি জানায়, ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্পটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়েছে।
রোববারের ভূমিকম্পটি ছিল ৪ মাত্রার, উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর ঘোড়াশালে।
তবে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা ভারতের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল সেন্টার ফর সাইসমোলজির তথ্যকেই বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য ও ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,
এই ভূমিকম্প ইন্ডিয়ান প্লেটের অভ্যন্তরে হয়েছে। সাধারণত ভূমিকম্প হয় দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে। এটা হয়েছে প্লেটের মধ্যেই।
ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের পরস্পরমুখী গতির প্রতিক্রিয়ায় ইন্ডিয়ান প্লেটে মধুপুর গড়ের সখিপুরে ভূমিকম্পটি স্বল্প গভীরতায় সংঘটিত হয়েছে।
এটা মধুপুর ফল্টের তলে হয়ে থাকতে পারে। মধুপুর ফল্ট উত্তরের শেরপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণের কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত।
মধুপুর গড় এই ফল্টের ওপরেই অবস্থিত। ৮-১২ বছর আগেও টাঙ্গাইল-মির্জাপুর অঞ্চলে ৪ থেকে ৪.৩ মাত্রার বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী,
চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
৫ মে ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে দোহারে উৎপত্তি হওয়া ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্পটি বেশ আতঙ্ক তৈরি করে মানুষের মধ্যে।
একই মাসের ১৭ তারিখে ৩.৩ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে নেত্রকোনায়।
সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় গত ১৬ জুন।
তবে এখন পর্যন্ত চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয় গত ১৪ আগস্ট।
৫.৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে।
শুধু চলতি বছরই নয়, ২০ বছরের মধ্যে দেশের ভেতর উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে এটি ছিল সর্বোচ্চ মাত্রার।
এর ১৫ দিনের মধ্যেই গত ২৯ আগস্ট সিলেটে ৩.৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়।
এ বিষয়ে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়াৎ কবীর বলেন,
‘সংঘটিত সব ভূমিকম্প বাংলাদেশে অনুভূত হয়েছেই—এমনটা বলা যাবে না, তবে অনেকটিই অনুভূত হয়েছে। ’
তবে ভারতের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকারী সরকারি সংস্থাটির চলতি বছর ভূমিকম্প সংঘটনের বিভিন্ন মানচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে,
বাংলাদেশের সীমানারেখার ওপরে (বা সীমানা ঘেঁষে) ও সীমানার ভেতরে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি ভূমিকম্প হয়েছে।