আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, রাঙামাটির অংসুই প্রু চৌধুরী ও বান্দরবানের ক্যশৈহ্লা পলাতক রয়েছেন। তবে অনেকে বলছেন মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ভারতে রয়েছেন এবং ক্যশৈহ্লা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড চলে গেছেন। তবে এই দুজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেননি। তারা কাগজে-কলমে এখনও বহাল থাকলেও কর্মস্থলে আসছেন না অনেক দিন। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে তিন পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতসহ চলমান কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। যদিও শিগগিরই নতুন পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কেউই এখন আর নিজেদের কার্যালয়ে আসেননি। বাড়িতেও নেই। দলীয় লোকদের কাছেও তারা পলাতক। এই তিন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। ক্ষমতার দাপটে তারা ছিলেন একচ্ছত্র। তবে এর পেছনে পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা গত তিন যুগে নির্বাচন না হওয়াকে দায়ী করেছেন। সর্বশেষ ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন তিন বছর মেয়াদের জন্য এই তিন জেলা পরিষদে একবার নির্বাচন হয়েছিল। পরে সেটির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানো হলেও নির্বাচনের আর কোনো দেখা পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগের শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় কষ্টে দিন যাপন করছেন। পার্বত্য চুক্তির আলোকে পাহাড়ের নাগরিক সেবার সব কটিই হস্তান্তরিত হওয়ায় বর্তমানে শত শত মানুষ সেবা না পেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম শামিমুল হক বলেন, কিছুটা সংকট হয়েছে। তবে তা কেটে উঠবে বলে আশাবাদী। কেন না, এরই মধ্যে নতুন পরিষদ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান এলে এসব সমস্যা আর থাকবে না।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই সময় পাহাড়ে বসবাসরত এক ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার দাবির বিষয়ে রায় পান। পরে নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেওয়ায় দলীয় লোকজন দিয়ে এখনো চলছে জেলা পরিষদের কার্যক্রম। এদিকে হাসিনা সরকারের পতনের পর আরও পাহাড়ি নেতা পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন রাঙামাটির সাবেক এমপি দিপঙ্কর তালুকদার, খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বান্দরবানের সাবেক এমপি বীর বাহাদুর উশৈসিং ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি জরতী তংচঙ্গ্যা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি মো. লোকমান হোসেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিরা বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। জেলা পরিষদ নির্বাচন দেওয়ার জন্য দাবি জানাই।
সর্বশেষ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েছেন সুপ্রদীপ চাকমা। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন রিপন চাকমা। এ ছাড়া পাহাড়ের আলোচিত ও সমালোচিত নেতা সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত আছেন। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা সব ধরনের সাম্প্রদায়িক হিংসা পরিত্যাগ করে আগামীতে পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সচেতন মহল।
নবান্ন টিভি/ বিপ্লব তালুকদার