২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় ভোক্তাদের জন্য থাকছে বেশ কিছু সুখবর। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।নিত্যপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অনেক পণ্যের দাম কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ।
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ ঢাকা, ২ জুন ২০২৫, সোমবার বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবেন। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৪ শতাংশ)। বাজেটে, মূল প্রস্তাবগুলোর মধ্যে থাকবে ৬২২ পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়া বা কমানো এবং বাণিজ্য বাড়াতে আরও ১০০ পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানো। এর মধ্যে আছে কাগজের পণ্য, হিমাগারের যন্ত্রপাতি, নিউজপ্রিন্ট, বাস, ক্যানসারের চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং ওষুধ ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের কাঁচামাল।
চামড়াশিল্প ও নির্মাণ খাতে ইতিবাচক প্রভাব:
আসছে ঈদুল আজহা ,চামড়া প্রক্রিয়াজাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক উৎপাদনের শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার চিন্তা করা হয়েছে। এতে চামড়া শিল্পে উৎপাদন খরচ কমবে। এছাড়া,ব্রেকপ্যাড, টায়ার, গ্রানাইট ও মার্বেলের কাঁচামালের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব রয়েছে, যা নির্মাণ ও পরিবহন খাতেও ব্যয় হ্রাস করবে।
গণপরিবহন ও মাইক্রোবাসের শুল্ক:
যানজট দূরীকরণের উদ্দ্যেশে ১৬-৪০ আসনের বাসের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০৫ শতাংশ করা হচ্ছে। মাইক্রোবাসের (১০-১৫টি আসন) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে।
কৃষিপণ্য ও খাদ্যপণ্যে শুল্কছাড়:
ধান, গম, পেঁয়াজ, রসুন, আলু,ছোলা, মসুর ডাল, মটরশুঁটি, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) কমিশনের ওপর উৎসে কর অর্ধেক করার প্রস্তাব রয়েছে।
মার্কিন শুল্ক প্রতিক্রিয়া:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য সংকট মোকাবিলায় অতিরিক্ত ১০০ পণ্যে শূন্য আমদানি শুল্কের প্রস্তাব দিতে যাচেছ । ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তনের পর বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৭ শতাংশ শুল্কের প্রভাব কমাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।এই তালিকায় সামরিক সরঞ্জাম ও শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি, বস্ত্র খাতের কাঁচামাল রয়েছে। সরকার নতুন শুল্কের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং বাজারে মার্কিন পণ্য বাড়াতে শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা বাড়াতে চায় ।
করপোরেট ও আয়করে পরিবর্তন:
রাজস্ব বাড়াতে ধনীদের আয়করের হার ৩০ শতাংশ করে বেশ কয়েকটি আয়করের সমন্বিত ব্যবস্থা চালু করতে পারে। গতিশীল কর কাঠামো চালু করে অন্যান্য আয়কর হার সামঞ্জস্য করা যেতে পারে।
অন্যান্য পণ্য ও খাতে সুবিধা:
দেশে উৎপাদিত চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও রাজস্ব আয় বাড়াতে পরিশোধিত চিনিতে সুনির্দিষ্ট শুল্ক টনপ্রতি ৪,৫০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা করতে পারে।
বাটার, পোড়ামাটির প্লেট, জাপানি স্ক্যালোপ: আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করতে পারে
দেশি শিরিস কাগজের দামও কমতে পারে।
পটাশিয়াম আয়োডেটের (লবণ) আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার।বিদেশি জুসে সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ কে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করতে পারে।
পিভিসি পাইপ এবং কপার ওয়্যার তৈরির উপকরণে শুল্ক হ্রাস
অনলাইনে পণ্য কেনায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট, খরচ বাড়বে ভোক্তাদের
বিদেশে অর্থ পাচারে কড়াকড়ি, আসছে নতুন কর ও জরিমানার প্রস্তাব
হেলিকপ্টার আমদানিতে কোনো শুল্ক ছিল না, নতুন অর্থবছরে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর প্রস্তাব রয়েছে, যা আমদানির খরচ বাড়াবে।এবারের বাজেটের প্রস্তাবনায় টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক্স ও গৃহস্থালী পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোয় জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে পারে। তবে কিছু আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক কমানোয় কিছু পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে। ভোক্তাপর্যায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সরকারের নিত্যপণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ভোক্তাদের হাতে বাড়তি অর্থ থাকবে, যা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।