আগামী শনিবার পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার আগেই তিন স্তরে টিকিট যাচাই করা হচ্ছে। প্রথমে প্রবেশমুখে, তারপর স্টেশন চত্বরে এবং সবশেষে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে টিকিট দেখাতে হচ্ছে। বিনা টিকিটে কেউ স্টেশনে প্রবেশ করতে পারছেন না।
কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড়, তবে ট্রেন চলাচলে কোনো শিডিউল বিপর্যয় নেই। যাত্রীরা বলছেন—এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সকাল ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ২২টি ট্রেন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৬টি কমিউটার ও বাকিগুলো আন্তঃনগর ট্রেন। সারাদিনে মোট ৬৩টি ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে। এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের খবর নেই।
তিনি আরও বলেন, “নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট, তিন স্তরের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চালু রাখা হয়েছে।”
যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চুরি, ছিনতাইসহ যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে স্টেশন জুড়ে রয়েছে পুলিশের কঠোর নজরদারি। প্ল্যাটফর্মে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত রেল পুলিশ ও র্যাব সদস্য।
এবার যাত্রীরা অনলাইনে সহজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারায় স্টেশনে অতিরিক্ত চাপ পড়েনি। অনেকে জানিয়েছেন, আগে যেখানে টিকিট পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো, এবার তা হয়নি। সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় স্বস্তির প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
প্ল্যাটফর্মে দেখা গেছে—বাচ্চাদের হাত ধরে মা-বাবা, হাতে স্যুটকেস আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাজারো মানুষ অপেক্ষা করছেন ট্রেনের। যাত্রীদের চোখেমুখে ঈদের আনন্দ। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফেরা, আবার কেউ প্রথমবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করছেন—এই মিলন মেলা যেন স্টেশনকেই পরিণত করেছে উৎসবমুখর পরিবেশে।
ঢাকার বাইরে যাওয়া যাত্রী সুমনা ইসলাম বলেন, “ট্রেনের সময় মতো ছেড়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা। আগে অনেক কষ্ট করতে হতো, এবার তা নেই।”
ঈদযাত্রার অভিজ্ঞতা নিয়ে শান্তাহারগামী যাত্রী রুস্তম আলী বলেন, “প্রতি ঈদেই বাড়ি যাই। তবে এবার ছুটি বেশি, প্রস্তুতিও ভালোভাবে নিতে পেরেছি। ট্রেন সময়মতো ছাড়ছে, তাই কোনো চাপ নেই। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারব ভেবে ভালো লাগছে।”
এই বছরের ঈদযাত্রা এখন পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন এবং যাত্রীবান্ধব। সময়মতো ট্রেন চলাচল, অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় অনেক যাত্রীই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এটাই বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা।