অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের রাষ্ট্রীয় বা সরকারি কাজে দেশের বাহিরে যাওয়া এবং আসার সময় বিমানবন্দরে এবং দেশের অভ্যন্তরে সফরকালে অনুসরণীয় রাষ্ট্রাচার সংক্রান্ত নির্দেশাবলি প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সকল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে৷ এতে সই করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন৷ এতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় বা সরকারি কাজে বিদেশে ও দেশের অভ্যন্তরে সফরকালীন উপদেষ্টাদের বিদায় সংবর্ধনা ও স্বাগত জানানোর জন্য নীতিনির্ধারণ করে সরকার নতুন নির্দেশাবলি জারি করছে।
বিদেশ সফর: উপদেষ্টাদের বিদেশে গমন ও প্রত্যাবর্তনকালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম সচিব বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন।
দেশের অভ্যন্তরে সফর: ১. দেশের অভ্যন্তরে সফরকালে উপদেষ্টাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী তার ঢাকা ত্যাগ ও প্রত্যাবর্তনস্থলে মন্ত্রণালয়/বিভাগের উপদেষ্টার একান্ত সচিব উপস্থিত থাকবেন। ২. জেলা সদরে যথাসম্ভব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের স্থানীয় পর্যায়ের জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা উপদেষ্টাকে আগমন ও বিদায়ের স্থানে অভ্যর্থনা ও বিদায় সংবর্ধনা জানাবেন। ৩. জেলা সদরে উপস্থিত থাকার জন্য জেলা প্রশাসক অথবা পুলিশ সুপারের নিজের সরকারি সফর বাতিল বা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে না। এরূপ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক/অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা ও বিদায় সংবর্ধনা জানাবেন। জেলা প্রশাসক আগেই নিজের সফরসূচি জারি করে থাকলে উপদেষ্টার সফরসূচি পাওয়ার পরই উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হবেন যে, জেলা প্রশাসকের সদরে থাকা আবশ্যক কি না। উপদেষ্টা এরূপ ইচ্ছা প্রকাশ করলে সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক তার সফরসূচি বাতিল করবেন। ৪. উপজেলা সদর অথবা উপজেলার অন্য কোনো স্থানে উপদেষ্টার সফরকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের স্থানীয় পর্যায়ের জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা উপদেষ্টাকে অভ্যর্থনা ও বিদায় সংবর্ধনা জানাবেন। আবশ্যক না হলে জেলা প্রশাসক কিংবা পুলিশ সুপারের এ ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। ৫. উপদেষ্টার আগমন ও প্রস্থানের সময় আবশ্যক না হলে বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনে জেলা প্রশাসক, ঢাকা/চট্টগ্রাম/কক্সবাজারের উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। পুলিশ সুপার, কক্সবাজার/মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। ৬. কোনো জেলা/উপজেলায় উপদেষ্টার আগমন/প্রস্থানের সময় আশপাশের জেলার বিমানবন্দর/রেলস্টেশন ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হলে ট্রানজিট স্থানে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের উপস্থিতির প্রয়োজন নেই; এ ক্ষেত্রে ট্রানজিট স্থানে জেলা প্রশাসকের উপযুক্ত প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। ৭. উপদেষ্টাদের আগমন ও প্রস্থানের সময় বিভাগীয় কমিশনার অথবা সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের (ডিআইজি) উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। বিভাগীয় কমিশনার সদর দফতরে উপস্থিত থাকলে উপদেষ্টার আগমনের পর তিনি তার সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ করতে পারেন। ৮. উপদেষ্টাদের সফরসূচি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ৯. দেশের অভ্যন্তরে উপদেষ্টার রেলযোগে ভ্রমণকালীন রেলওয়ে পুলিশ নিম্নোল্লিখিত নির্দেশাবলি অনুসরণ করবে: (ক) উপদেষ্টার সফরসূচি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশ সুপার তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট রুটের সব পুলিশ স্টেশন/ফাঁড়িকে অবহিত করবেন। (খ) যে স্টেশনে উপদেষ্টা ট্রেন থেকে অবতরণ এবং ট্রেনে পুনরায় আরোহণ করবেন অথবা কোনো জংশনে যে স্থানে ট্রেন বদলের প্রয়োজন হবে সেসব স্থানে পুলিশের একজন পরিদর্শক/উপপরিদর্শক উপস্থিত থাকবেন। (গ) রেলযোগে চট্টগ্রামে গমন ও প্রস্থানের সময় সেখানে চট্টগ্রাম রেলওয়ের পুলিশ সুপার উপস্থিত থাকবেন।
সাধারণ নির্দেশাবলি: ১. উপদেষ্টাদের সফরসূচি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে যথাসময়ে পাঠাতে হবে। সফরসূচিতে কোনো পরিবর্তন হলে তা-ও যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে হবে। ২. সার্কিট হাউস/সরকারি রেস্ট হাউস ব্যতীত নিজ বাড়ি কিংবা অন্যত্র অবস্থানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রাচার সংক্রান্ত বিদ্যমান নির্দেশাবলি প্রযোজ্য হবে। সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ৩. সফরসূচি প্রণয়নের সময় সফরটি সরকারি, না ব্যক্তিগত তা উপদেষ্টাদের দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করতে হবে। সরকারি সফরের সময় উপদেষ্টাদের জন্য যানবাহন ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। ব্যক্তিগত সফরের জন্য যানবাহন ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হলে এ-সংক্রান্ত সেবার মূল্য পরিশোধের প্রচলিত নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ৪. উপদেষ্টার একান্ত সচিব/সহকারী একান্ত সচিবরা উপদেষ্টার ইচ্ছা অনুযায়ী এতৎসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবেন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রীয়/সরকারি কাজে বিদেশে গমন ও দেশে প্রত্যাগমনের সময় বিমানবন্দরে এবং দেশের অভ্যন্তরে সফরকালে অনুসরণীয় রাষ্ট্রাচার সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিলের স্মারকে জারি করা নির্দেশাবলি বাতিল করা হলো বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।