সাফের ফাইলানে নেপালের বিপক্ষে দুই গোল করে বাংলাদেশকে আনন্দের জোয়ারে ভাসানো কৃষ্ণা রাণী সরকার দীর্ঘদিন থেকেই ইনজুরিতে ভুগছেন। ২০২২ সাফের পরই ইনজুরিতে পরেন এই নারী ফুটবলার। আরও একটি সাফ সামনে কড়া নাড়লেও কৃষ্ণাকে ফিট করে তুলতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
ইনজুরি প্রায় দেড় বছরে হয়ে যাচ্ছে। অনুশীলন করলেই হয় ব্যথা। বাফুফের ফিজিও দ্বারা চিকিৎসা চলমান থাকলেও, কোনো কাজ হচ্ছে না। গত বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশীষ চৌধুরীকে দেখানো হয় ইনজুরি। ব্যথা না কমায় পরামর্শ দেন অস্ট্রেলিয়া, অথবা ভারতে চিকিৎসা করাতে। বাফুফে’কে অনেকদিন ভারতে যাওয়ার কথা বললেও তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি।
কৃষ্ণা তার ইনজুরির ব্যাপারটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট লিখেছেন, সেই পোস্টে এসব ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই নারী ফুটবলার। কোচ সতীর্থরাও তার ইনজুরির ব্যাপার নিয়ে বোর্ডকে কখনও কিছু বলেনি, প্রকাশ করেছেন সেই হতাশাও।
কৃষ্ণা রাণী সরকার তার ইনজুরির ব্যপার নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি না হলেও, সময় সংবাদকে বলেছেন ফেসবুক পোস্টটি নিজের মধ্যে জমে থাকা কথার বহিঃপ্রকাশ, এছাড়া কিছু না। ফেডারেশনের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ এক সূত্র জানিয়েছে, কৃষ্ণাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাবে না বাফুফে। বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ফেডারেশন শুধুমাত্র চিকিৎসার নির্দিষ্ট খরচ দিবে। যাতায়াত ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিদেশে থাকার খরচ বাফুফে বহন করবে না।
৩০ মে রাতে কৃষ্ণা তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, ‘২০২২ এ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে ইঞ্জুরিতে পরি। প্রায়ই দেড় বছর হয়ে গেছে। পা আগে থেকে ভালো কিন্ত এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারিনি। প্র্যাকটিস করলেই ব্যথা হয়। বাফুফে ফিজিও দিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট চলছে। সবাই জানে ইনজুরি টা অনেক রেয়ার। ব্যথা নিয়েই প্র্যাকটিস করতেছি। দেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘২০২৩ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফিজিও দেবাশীষ চৌধুরী স্যারকে দেখিয়েছিলাম। উনি প্রায় আমাকে অনেকদিন দেখেন, যখন ব্যথা কমতে ছিল না। স্যার বলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতে। কিন্তু যখন আমি বাফুফে জানাই, উনারা বলেন আরো কিছুদিন দেশে ডাক্তার দেখাতে। আমি অনেকদিন তাদেরকে ইন্ডিয়াতে যাওয়ার কথা বলছি। কিন্তু উনারা আমার কথায় কোন গুরুত্ব দেয়নি। আজও পর্যন্ত ব্যাথা নিয়ে প্র্যাকটিস করছি। ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব ১৪ দলে সুযোগ পাই এবং ২০১৪ সালে সিনিয়ার জাতীয় দলে সুযোগ পাই, সেখান থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কখনো কোনো দলের বাইরে থাকে হয়নি। প্রায় ১০ বছর একটানা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছি। টুকটাক ইনজুরিতে পড়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে এত বড় ইনজুরিতে পড়বো কখনো ভাবি নি। অনেকদিন রেস্টে থাকার পর আর ভালো লাগছিল না এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। তাই ব্যথা নিয়ে প্রাক্টিস চালিয়ে যাচ্ছি।
চায়নাতে যখন এশিয়ান গেম খেলতে যাই, তিনটা ম্যাচ ব্রাঞ্চে বসে কাটিয়েছে। ব্যাক টু ব্যাক দুইটা টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে গেলাম। একজন প্লেয়ার হিসেবে এইটা মেনে নেওয়া খুব দুঃখজনক। কষ্ট একটাই কখনো কোন টিমমেট, প্লেয়ার বা কোচ কে বলতে দেখলাম না কৃষ্ণা ইনজুরি তাকে তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট করানো হোক। কারো কোন মাথা ব্যথাই নেই।
১০ বছরের পরিশ্রম এক নিমিষে শেষ।
অনেক প্লেয়ারকে দেখেছি এভাবে হারিয়ে যেতে। মনে হয় সেই দিনটা আর বেশি দিন নেই কৃষ্ণার জন্য। সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ এবং দোয়া করবেন। যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পরি। আবার আগের মতো মাঠে ফিরতে পারি।’