মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন ধনকুবের বিল গেটস নিজের ৯৯ শতাংশ সম্পদ দান করে দেয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন। এবার তিনি জানিয়েছেন, তার সম্পদের বেশিভাগই আগামী ২০ বছরে আফ্রিকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের সেবার উন্নয়নে ব্যয় করবেন। তিনি জানান, তার ফাউন্ডেশন আফ্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।
৬৯ বছর বয়সী এই ধনকুবের গত মাসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০৪৫ সালের মধ্যে তার সম্পদ প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং সেখান থেকে ৯৯ শতাংশই তিনি দান করবেন। ওই বছরেই ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ কার্যক্রম বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।গত মাসে বিল গেটস জানান, ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তার দাতব্য কার্যক্রম আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।
আগামী ২০ বছরে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস আফ্রিকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে নিজের সম্পদের বেশিরভাগ ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছেন । তার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন মোজাম্বিকের সাবেক ফার্স্ট লেডি গ্রাসা মাশেল। তিনি বলেন, ‘এই সংকটময় সময়ে বিল গেটসের প্রতিশ্রুতি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি জানান, বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটসহ অন্যান্য দানশীল ব্যক্তিকে দেখেই তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বিল গেটস বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে আফ্রিকার প্রতিটি দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’বিল গেটস বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার প্রতিটি দেশকে একটি সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে হবে।’
নিজের এক ব্লগ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমার মৃত্যুর পর মানুষ অনেক কিছুই বলবে, তবে আমি অন্তত এটুকু নিশ্চিত করে যেতে চাই যাতে কেউ যেন না বলে—’তিনি ধনী অবস্থায় মারা গেছেন।’
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, তার ৯৯ শতাংশ সম্পদ দান করার পরেও তিনি বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিলিয়নিয়ারই থেকে যাবেন।
গেটস ফাউন্ডেশনের তিনটি প্রধান লক্ষ্য—মা ও শিশুর প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু রোধ, পরবর্তী প্রজন্মকে প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত রাখা এবং লাখো মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া।
গেটস জানান, তার ফাউন্ডেশন আফ্রিকায় দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে এবং এখন প্রধানত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নেই জোর দেবে। তিনি বলেন, ’আমরা দেখেছি, একজন গর্ভবতী মায়ের সুস্বাস্থ্য ও সঠিক পুষ্টি, গর্ভধারণের আগে ও গর্ভকালীন সময়ে নিশ্চিত করতে পারলে সবচেয়ে ভালো ফল মেলে।‘ তিনি জানান, শিশুর প্রথম চার বছরেও পুষ্টির সঠিক সরবরাহ জীবনভর প্রভাব ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় আফ্রিকায় সহায়তা কমিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে এইচআইভি/এইডস চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি এক বক্তব্যে তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মোবাইল ফোন যেভাবে আফ্রিকায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে, তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবাতেও উন্নয়ন সম্ভব।
গেটস রুয়ান্ডার উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে ইতোমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক আলট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা শনাক্ত করা হচ্ছে।
তবে, সমালোচকদের মতে, তার ফাউন্ডেশন দান করার মাধ্যমে কর ফাঁকির সুযোগ নেয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অস্বাভাবিক প্রভাব খাটায়।