রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন।
তবে বুধবার (২৩ আগস্ট) এক বিমান দুর্ঘটনায় পাওয়া গেছে তার মৃত্যুর খবর।
বিধ্বস্ত বিমানের যাত্রী তালিকায় প্রিগোজিনের নাম থাকার কথা জানিয়েছে রাশিয়ার বিমান সংস্থাও।
কিন্তু তালিকায় যে প্রিগোজিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ওয়াগনার প্রধানই কি না, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
রাশিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, প্রিগোজিনের নাম বিমানের যাত্রী তালিকায় ছিল এবং ওয়াগনার-সংশ্লিষ্ট একটি টেলিগ্রাম গ্রুপও দাবি করেছে যে তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
বিমানটিতে তিন জন ক্রু ও সাত যাত্রীসহ মোট ১০ আরোহী ছিল।
কিন্তু প্রিগোজিনের মৃত্যুর বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করার কোনো উপায় না থাকায় অনেক বিশ্লেষক এ নিয়ে ‘সতর্ক’ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
লন্ডনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের বিশ্লেষক কেয়ার জিলস বলেছেন, ‘এ বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজন আছে, যা আমাদের বিবেচনা করা দরকার।’
তিনি আরও বলেন,
তবে এটিও অজানা নয় যে, ওয়াগনার প্রধানের ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য অস্পষ্ট করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অনেকেই তাদের নাম পরিবর্তন করে ইয়েভগেনি প্রিগোজিন রেখেছেন।
‘বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত; আসল প্রিগোজিন যদি আফ্রিকা থেকে নিজের একটি নতুন ভিডিও প্রকাশ করেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না,’ যোগ করেন তিনি।
বিমানের অন্য আরোহী কারা ছিলেন?
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিমানটিতে থাকা ১০ জনের সবাই নিহত হয়েছেন। সবার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
তারা হলেন: প্রিগোজিন এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী দিমিত্রি উতকিন, সের্গেই প্রপুস্টিন, ইয়েভগেনি মাকারিয়ান, আলেকজান্ডার ততমিন, ভ্যালেরি চেকালভ এবং নিকোলাই মাতুসেয়েভ।
এছাড়া ক্রু সদস্যরা হলেন: ক্যাপ্টেন আলেক্সি লেভশিন, কো-পাইলট রুস্তম করিমভ এবং ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ক্রিস্টিনা রাসপোপোভা।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, পুতিনের সঙ্গে পরিচয়ে সূত্র ধরে ক্রেমলিনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন প্রিগোজিন।
ততদিনে রাশিয়ায় একজন উঠতি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত পেয়ে যান তিনি।
ক্রেমলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন লোভনীয় সরকারি ঠিকাদারি কাজ সহজেই পেয়ে যেতেন।
আর এসব কাজ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন তিনি।
ধারণা করা হয়, এই অর্থ দিয়েই ওয়াগনার বাহিনী গড়ে তোলেন প্রিগোজিন।
পরবর্তীতে তিনি নিজেই বাহিনীর শীর্ষ নির্বাহী ও কমান্ডার পদে যুক্ত হন।
যেভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন প্রিগোজিন
ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রিগোজিন অভিযোগ করা শুরু করেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান জেনারেল গেরাসিমভ তার বাহিনীকে পর্যাপ্ত অর্থ, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সহায়তা দিচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে তিনি খোলাখুলিই রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের সমালোচনা শুরু করেন।
সেখানে তিনি রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি তার ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন এবং প্রথমবারের মতো পুতিনের ইউক্রেন হামলার মূল উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেলে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার ‘শয়তান সামরিক নেতৃত্বকে’ অবশ্যই থামাতে হবে।
ন্যায় প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে ওয়াগনার।
এর প্রতিক্রিয়ায় রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা ঠুকে দেয়।
পরের দিন ২৪ জুন ওয়াগনার প্রধান ঘোষণা দেন, তার বাহিনী ইউক্রেন থেকে রাশিয়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে এবং সীমান্ত পেরিয়ে রোস্তভ-অন-ডন শহরটির দখলও নিয়েছে।
পরে অবশ্য সারাদিন দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় সেই অবস্থান থেকে সরে আসে ওয়াগনার।
ওই ঘটনার পর থেকেই প্রিগোজিনকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল।
তার অবস্থান নিয়েও ছিল রহস্য। এর মধ্যেই বুধবার এই বিমান দুর্ঘটনা ঘটল।