ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে এবার ‘অস্বচ্ছ লেনদেন’ ও ‘শেয়ার জালিয়াতি’র অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, গৌতম পরিবার বা ঘনিষ্ঠরা অস্বচ্ছভাবে বা গোপনে আদানি গ্রুপের শেয়ারে বিনিয়োগ করছে।
অর্থাৎ নিজেদের শেয়ার নিজেরাই কিনছে।
কয়েক মাস আগে গত ২৪ জানুয়ারি আদানি গ্রুপের দুর্নীতি ও জালিয়াতি নিয়ে চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ।
তাতে বলা হয়, বহুদিন ধরে শেয়ারবাজার কারসাজি ও আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা চালিয়ে আসছে আদানি গ্রুপ।
গত কয়েক বছরে আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার ৫০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির শেয়ারের দর পড়তে শুরু করে এবং কয়েকদিনের মধ্যে কয়েক হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ খোয়ান গৌতম আদানি।
যদিও হিন্ডেনবার্গের সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেয় আদানি গ্রুপ। তবে সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়।
চলমান সেই তদন্তের মধ্যেই সামনে এলো অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক সংগঠন ‘অর্গানাইজড্ ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট’র (ওসিসিআরপি) চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন।
ওসিসিআরপি’র সংগৃহীত নথিপত্র ও অনুসন্ধানের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ওসিসিআরপি বলেছে, তাদের হাতে এমন সব নথি রয়েছে যা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের সেই দাবিকে সমর্থন করে যে, শেয়ারের দর বাড়াতে জালিয়াতি করেছিল আদানি গ্রুপ।
অলাভজনক মিডিয়া সংস্থা ওসিসিআরপি’র গোপন নথির বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে,
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন একটি বিলিয়নিয়ার পরিবার গোপনে ভারতীয় স্টক মার্কেটে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।
তাতে দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ ও প্রভাবশালী ব্যবসায় গোষ্ঠী হিসেবে উত্থান ঘটেছে আদানি গ্রুপের।
এই উত্থানের সময়কালেই এর শেয়ারের লেনদেনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।
আদানি পরিবারের ঘনিষ্ঠরা গত কয়েক বছর ধরেই গোপনীয়তার সঙ্গে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনে নেয়ার কাজটি করে যাচ্ছে।
ওসিসিআরপির প্রতিবেদন মতে, অন্তত দুটি ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে অস্বচ্ছভাবে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কেনাবেচা করা হয়েছে।
এতে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম তরতর করে বেড়েছে।
পরিণামে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনীর স্থানে উঠে আসেন।
তাদের সংগৃহীত নথি মতে, যে অফশোর কোম্পানি থেকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে,
সেগুলো থেকে এককভাবে লাভবান হয়েছেন গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী।
এছাড়া বিভিন্ন আর্থিক রেকর্ড ও সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, মরিশাসভিত্তিক তহবিল থেকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কেনায় যে বিনিয়োগ করা হয়েছে,
তা আবার দেখভাল করেছে দুবাইভিত্তিক এক কোম্পানি, যার পরিচালনায় আছেন বিনোদ আদানির একজন পরিচিত কর্মী।
দ্য গার্ডিয়ানের মতে, এসব ঘটনা উন্মোচিত হওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
কারণ গৌতম আদানির সঙ্গে তার সম্পর্ক ২০ বছরের পুরনো।
এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও নরেন্দ্র মোদি প্রশ্নের মুখে পড়েন।
নতুন করে সামনে আসে মোদি-আদানি সম্পর্কের বিষয়টি। এ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও।
তারা বলছেন, আদানি গোষ্ঠীকে মোদি সরকার বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।
এদিকে ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগের জবাব দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
তারা বলেছে, ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে মরিশাসের যে তহবিলের কথা বলা হয়েছে, সেটা হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনেও ছিল।
তাদের দাবি, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট থেকেই তুলে এনে তা প্রকাশ করেছে ওসিসিআরপি।
এরপর হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় যা বলেছিল, এবারও তার পুনরুক্তি করে বলেছে, ‘পুরো অভিযোগই ভিত্তিহীন’।