উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন রাশিয়া সফরের পরিকল্পনা করছেন। চলতি মাসের শেষ নাগাদ এই সফর হতে পারে।
এক্ষেত্রে ২০১৯ সালের মতো আবারও ট্রেনে চেপে রাশিয়া যেতে পারেন কিম।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপির এক প্রতিবেদন এমনটাই জানানো হয়েছে।
কিম জং উনের রাশিয়া সফর নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
এরপর মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিম জং উন চলতি মাসেই রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এই সফরকালে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।
বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে এর আগেও ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছিল।
তবে সেটি অস্বীকার করেছে পিয়ংইয়ং ও মস্কো।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কিম ও পুতিনের প্রত্যাশিত বৈঠকের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য এখনও জানা যায়নি।
তবে রাশিয়ার বন্দরনগরী ভ্লাদিভোস্তকে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এরই মধ্যে রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে উত্তর কোরিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘অস্ত্র সরবরাহ করলে উত্তর কোরিয়ার জন্য সেটা ভাল হবে না এবং এর মূল্য তাদেরকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দিতে হবে।’
এরপর খবরটি নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, সিবিএস নিউজ, সিএনএনসহ উল্লেখযোগ্য মার্কিন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলেও ক্রেমলিন বলেছে, এ ব্যাপারে তাদের ‘কোনো মন্তব্য’ নেই।
এক সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কিম সম্ভবত সাঁজোয়া ট্রেনে করে রাশিয়া সফর করতে পারেন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র সমঝোতা ‘অগ্রসর’ হওয়ার বিষয়ে তারা তথ্য পেয়েছেন।
চলতি বছরের জুলাই মাসে উত্তর কোরিয়া সফর করেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন,
ওই সফরের সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ‘পিয়ংইয়ংকে রাশিয়ার কাছে গোলাবারুদ বিক্রি করার বিষয়ে সম্মত করার’ চেষ্টা করেছিলেন।
ওই সফরকালে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বেশ কিছু অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়।
পুতিন ও কিম তখন থেকে ‘তাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করে আসছেন’ বলে জানান কিরবি।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কিম ও পুতিনের মধ্যে বৈঠকটি রাশিয়ার পূর্ব উপকূল ভ্লাদিভোস্তক শহরে হতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের কূটনৈতিক সংবাদদাতা এডওয়ার্ড ওং সিবিসি নিউজকে জানিয়েছেন,
উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল গত মাসের শেষের দিকে ভ্লাদিভোস্তক ও মস্কো ভ্রমণ করেছে।
ওং বলেন, ‘ওই প্রতিনিধি দলের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ছিলেন যারা উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার ভ্রমণ ও অন্যান্য প্রটোকলের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে।
এই বিষয়টি কিম জং আনের ভ্লাদিভোস্তক শহরে সফরের বিষয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয়।’
তিনি আরও বলেন, উত্তর কোরিয়া তাদের কৃত্রিম উপগ্রহ ও পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন কর্মসূচির জন্য মস্কোর কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা চাইছে।
তার কথায়, ‘এ ছাড়াও উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি।
দেশটি প্রায়শই ব্যাপক খাদ্যাভাবের মধ্য দিয়ে যায় এবং তারা রাশিয়ার কাছ থেকে খাদ্য সহায়তাও চাইছে।’
জন এভারার্ড ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়ায় যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিবিসিকে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘কিমের সম্ভাব্য সফরের বিষয়ে এতো প্রচার প্রচারণা হওয়া একটি বিষয় ইঙ্গিত করে যে, এখন এই সফর হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।’
কারণ ব্যাখ্যা করে এভারার্ড বলেন, ‘কিম জং উন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে অতি উদ্বিগ্ন।
তিনি তার গতিবিধি গোপন রাখতে অনেক চেষ্টা করেন এবং যদি এটি জানাজানি হয়ে যায় যে,
তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে দেখা করতে ভ্লাদিভোস্তকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাহলে তিনি সম্ভবত পুরো পরিকল্পনাই বাতিল করে দেবেন।’
এই কূটনীতিক আরও বলেন, পিয়ংইয়ং জানে যে, মস্কো যুদ্ধাস্ত্রের জন্য ‘মরিয়া’ হয়ে উঠেছে।
উত্তর কোরিয়ার কাছে অস্ত্রের মজুদ থাকলেও ‘তারা খুবই দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থায় আছে।’
পুতিন ও কিমের সবশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৯ সালে। কিম সেবার ট্রেনে করে ভ্লাদিভোস্তকে গিয়েছিলেন। এতে তার সময় লেগেছিল ২০ ঘণ্টা।
সেবার বৈঠকের পর পুতিন বলেন, কিম তার পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসতে চাইলে তাকে ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ দিতে হবে।
এই বৈঠকের অন্তত কয়েক মাস আগে ভিয়েতনামে কিম ও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে একটি শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল।
কিন্তু ওই বৈঠকের পর পরমাণু ইস্যুতে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।