সিরিয়ার জন্য ২৩৫ মিলিয়ন ইউরোর সাহায্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রধান হাদজা লাহবিব।
এই সহায়তা সিরিয়ার অধিবাসী ও প্রতিবেশি দেশগুলোতে বসবাসরত সিরিয়ানদের জন্য ব্যয় করা হবে।
সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাতের পর শুক্রবারের হাদজা লাহবিবের সফরই ছিল ইইউর কোনও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার এটি প্রথম সফর।
এই সফরেরই বিপুল অঙ্কের এই সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেন তিনি। এর আগে ফ্রান্স এবং জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরিয়া সফরে গিয়েছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উত্তরণের আহ্বান জানান তারা।
এর দুই সপ্তাহ পরেই দেশটিতে সফর করলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হাদজা লাহবিব।
সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারার সঙ্গে দেখা করার পর দামেস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে লাহবিব বলেন, সিরিয়া এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে ২৩৫ মিলিয়ন ইউরোর (২৪২ মিলিয়ন ডলার) মানবিক সহায়তার একটি নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করতে এসেছি।
এ সহায়তা প্যাকেজ আশ্রয়, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জরুরি প্রয়োজনের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সহায়তা করা হবে।
লেবাননসহ প্রতিবেশী দেশগুলো বছরের পর বছর ধরে লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে।
লাহবিব বলেন, আমরা আশা করি দুর্গম এবং সংঘাত-কবলিত এলাকাসহ সিরিয়ার সব অঞ্চলে মানবিক সহায়তা প্রদানকারীদের জন্য অবাধ এবং নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা দখলকারী আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশটির শাসনভার গ্রহণ করে।
লাহবিব বলেন, আমরা একটি সন্ধিক্ষণে আছি এবং আগামী দিনগুলোতে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা একটি ইতিহাস রচনা করেছেন এবং আমরা এটিতে ইতিবাচক হিসেবে উৎসাহিত করতে চাই, যা সিরিয়ার নাগরিকদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যত গড়ে তোলার মাধ্যমে শুরু হবে।
বৈঠকে সিরিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন লাহবিব। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় সাবেক সরকার এবং অর্থনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১১ সালে আসাদের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে নৃশংস অত্যাচার শুরুর পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য লবিং করছে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও দ্বিধাগ্রস্ত। তারা দেশটির দায়িত্ব নেওয়া নতুন কর্তৃপক্ষ কীভাবে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
আগামী ২৭ জানুয়ারি ব্রাসেলসে একটি বৈঠকে কিছু ব্যবস্থা শিথিল করার প্রস্তাব নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সভায় ঐক্যমত্যের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন হাদজা লাহবিব।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক নিষেধাজ্ঞাগুলোর জরুরি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটি সিরিয়ার নাগরিকদের অধিকারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।