ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে কোনো বিজ্ঞাপন বা ভিডিও ক্লিক করলে মুহূর্তেই একই ধরনের কনটেন্ট বারবার ব্যবহারকারীর সামনে আসে। ব্যবহারকারীর রুচি ও পছন্দের তথ্য বিশ্লেষণ করে কনটেন্ট কিংবা বিজ্ঞাপন সেট করছে ফেসবুক কিংবা ইউটিউব। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ডেটা সায়েন্স।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন ইন্টারনেট দুনিয়ায় দুই দশমিক পাঁচ কুইন ট্রিলিয়ন বাইটস তথ্যের উৎপত্তি হয়।
এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্মের কারণে আগামী দুই বছরে তথ্য উৎপাদনের হার অন্তত ৫০ গুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে বর্তমান ও ভবিষ্যতের ব্যবসায়িক কর্মকৌশল নির্ধারণে ডেটা সায়েন্সে বিশেষজ্ঞ কর্মী খুঁজছে অ্যামাজন ও গুগলের মতো বিশ্বের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৬ সাল নাগাদ ডেটাসায়েন্স খাতে কর্মসংস্থানের হার বাড়বে ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ।
২০৩০ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৩ শতাংশে। তা ছাড়া দেশেও দক্ষ কর্মী খুঁজছে মোবাইল অপারেটরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশও।
দেশে প্রথমবারের মতো দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে ডেটা সায়েন্স।
প্রতি ব্যাচে ৫০ জন শিক্ষার্থী পাচ্ছেন ডেটা সায়েন্সে পড়ার সুযোগ।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পরিসংখ্যান এবং ডেটা সায়েন্সের (আইএসআরটি) শিক্ষার্থী তাহসিন শাহরিয়ার বলেন,
এক পৃথিবীতে ডেটা সায়েন্সের অনেক চাহিদা।
আর আমার ভালো লাগে কারণ আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে পড়তে চাচ্ছিলাম যেখানে আমি আমার অ্যানালাইটিকস দক্ষতাগুলো ব্যবহার করতে পারব।
আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে পড়তে চাচ্ছিলাম যেটিতে কিছু ম্যাথমেটিকস থাকবে; কিছু প্রোগ্রামিং থাকবে।
কাজেই আমি এই সবকিছুই যেহেতু একটি বিষয়ের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি তাই আমার এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে ভালোই লাগছে।
কর্মসংস্থানের অবারিত সম্ভাবনা থাকায় তরুণ যেমন আগ্রহী হচ্ছে,
তেমনি গুরুত্ব অনুধাবন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ডেটা সায়েন্স নিয়ে পড়ার সুযোগ চালু করেছে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পরিসংখ্যান এবং ডেটা সায়েন্সের (আইএসআরটি) অধ্যাপক ড. হাসিনুর রহমান খান বলেন,
‘আমাদের দেশে স্নাতক শেষে শিক্ষার্থীরা যে বেতনে চাকরি পান, এ বিষয়টি নিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা সেই তুলনায় তিন-চার গুণ বেতন পাচ্ছেন।
এই স্নাতক প্রথম বর্ষ চালু হয়েছে। আবার মাস্টার্সও চালু হয়েছে। স্নাতক প্রথম বর্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
এটি আগে থেকেই এমন। কারণ আমাদের সক্ষমতা কম। তাই আমরা ৫০ জন শিক্ষার্থীই নিতে পেরেছি।
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। দেশে গড়ে উঠেছে ফোর টায়ার ডেটা সেন্টার।
এ ছাড়াও দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ডেটা সেন্টার নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সব মিলিয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ ডেটা সায়েন্সে দক্ষ অন্তত ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কর্মী দরকার।
বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক রাকিব আহমেদ বলেন,
ক্লাউড সিকিউরিটির নিয়ে কাজ করার জন্য আমাদের নির্দিষ্ট জনবল নেই।
কাজেই যদি এই বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করা কেউ আসত, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো।
কিন্তু তা না হওয়ার আমাদের সিএসই এবং ট্রিপল ই বিষয়ে পড়া শিক্ষার্থী দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে।
আমাদের সরকারের যে বিশাল তথ্য ভান্ডার সেখান থেকে আমাদের সেগুলো কাজে লাগিয়ে এআই ভিত্তিক ডিসিশন মেকিংয়ের দিকে যেতে হবে।
ঘাটতি মেটাতে দ্রুত দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেটা সায়েন্স পাঠদানের সুযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানির এই পরিচালক।