সংসারের কাজ করে, সন্তানদের সময় দিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি কাজী শবনম। আবার কিছু না করে, ঘরে বসেও থাকেননি তিনি। রিকশার পেছনে আঁকা পেইন্টিং দিয়ে ঘরের দরকারি আসবাব তিনি রাঙানো শুরু করেন।
পরিচিত রিকশা পেইন্টিং বদলে দিতে থাকে জগ, মগ, কেটলি কিংবা চায়ের কাপ, যা সাড়া জাগিয়েছে দেশ-বিদেশে। এ থেকে মাসে আয় করছেন লাখ টাকা।
নৈসর্গিকের স্বত্বাধিকারী কাজী শবনম বলেন,
‘যে কোনো পণ্য যদি ক্রেতা চায় বা কেউ যদি ফার্নিচারেও পেইন্টিং করাতে চায়, তাহলে তারা ক্রয়াদেশ দিলে আমরা সেই পণ্যগুলো তৈরি করে দিই।’
বর্তমান ফ্যাশন দুনিয়ায় নানা স্টাইলের প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছে ব্যতিক্রম এই ডিজাইন।
কারণ, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রিকশা পেইন্ট ঘরের জিনিসপত্রের গায়ে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
কাজী শবনম বলেন,
হঠাৎ গুগলে সার্চ করে আমি দেখলাম বিবি রাসেলের রিকশা পেন্টের পণ্যগুলো। তা দেখে আমার আগ্রহ হলো এই কাজ করার।
ধীরে ধীরে আমিও এই কাজ শুরু করলাম। পরে আমি অনেক ভালো প্রতিক্রিয়া পাওয়াও শুরু করলাম।
তবে ব্যবসা শুরুর যাত্রাটা আমার জন্য ততটাও মসৃণ ছিল না। কারণ, আমরা ব্র্যান্ডকে তো মানুষ হঠাৎ চিনবে না।
এখন হয়তো অনেক মানুষ নাম শুনলে চিনতে পারবেন।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাচ্ছে নৈসর্গিকের ব্যানারে শবনমের পণ্য।
যুগ যুগ ধরে বংশানুক্রমে রিকশা পেইন্ট ও ব্যানার আর্টের কাজ করেন এমন শিল্পীদের নিয়ে তিনি টিম গড়েছেন।
এ বিষয়ে নৈসর্গিকে এক কারিগর বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে আমি এখানে কাজ করি।
প্রতি মাসে আমি এখান থেকে ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পাই।’
কাজী শনবন জানান, বিশ্বেজুড়েই এমন কিছু আর্ট ঘরানার কাজ এখন নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন,
আমাদের ক্রেতাদের একটি বড় অংশ হচ্ছে প্রবাসী, যারা জানুয়ারি বা জুনে দেশে বেড়াতে আসেন।
কাজেই ওই সময়ে আমাদের বিক্রি ভালো হয়।
ভবিষ্যতে নৈসর্গিকের ব্যবসা আরও সম্প্রসারণের স্বপ্ন দেখেন কাজী শবনম। দিতে চান শোরুমও।
কেটলি বা চায়ের কাপে নিপুণ হাতে আঁকা রিকশা পেইন্টের এমন রঙের মতো নিজের জীবনও রাঙাছেন শবনম।
নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বড় করার পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির স্বপ্নও দেখেন নৈসর্গিকের প্রতিষ্ঠাতা।