তীব্র দাবদাহের পর স্বস্তির বৃষ্টি। প্রশান্তির বৃষ্টিমুখর দিনে অনেকে তাই শখের বশে বৃষ্টিতে ভিজেন। আবার অনেকে কর্মক্ষেত্রে যেতে গিয়ে কিংবা পথচলতি অবস্থায় না চাইলেও ভিজে যান বৃষ্টিতে। এ বৃষ্টিতে ভেজা ভালো না খারাপ তা নিয়ে অনেকেই দুই দলে ভাগ হয়ে যাবেন। কি তাই তো!

আপনি যদি বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তাহলে আজকের আয়োজন আপনারই জন্য। আপনি জেনে অবাক হবেন, যে করণেই আপনি বৃষ্টিতে ভিজেন না কেন, ভেজার পর কিন্তু আপনার অন্যরকম এক মানসিক অনুভূতি তৈরি হবে। শুধু তাই নয়, আপনার মিলবে বেশ কিছু উপকারিতাও। আসুন তা এক নজরে জেনে নিই-

১। স্বাস্থ্যকর চুল

বৃষ্টির পানিতে প্রাকৃতিকভাবে অ্যালকালাইন থাকে, যা চুলের ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। এটি চুলের গোড়া থেকে সব ময়লা ও খুশকি দূর করে। তাই নিয়মিত বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে রুক্ষ চুল অনেক বেশি স্বাস্থ্যজ্বল হয় ও চকচকে দেখায়। তবে বৃষ্টিতে ভেজার পর ভালোমতো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিমজাতীয় শ্যাম্পু বা সাবান ব্যবহার করেন।

২। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে

ভারি বর্ষণের সময় পরিবেশে যে জলীয় বাষ্প থাকে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কেবল তাই নয়, বৃষ্টির পর জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ার ফলে পরিবেশে থাকা একাধিক ক্ষতিকর জীবাণুর কর্মক্ষমতাও কমে যায়। ফলে ত্বক হয় আরও উজ্জ্বল ও নমনীয়। ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরে পেতে বৃষ্টি দারুণ কাজ করে।

৩। ঘামাচির সমস্যার সমাধান

বৃষ্টির পানিতে ভিজলে ত্বকের সৌন্দর্যই শুধু বাড়ে না, ঘামাচি থেকেও মুক্তি মেলে। ঘামাচির কারণে ত্বকের যে ক্ষতি হয় সেটিও রিকভার করে বৃষ্টির পানি।

৪। ভিটামিন বি-১২

বৃষ্টির পানি খুব হালকা এবং অ্যালকালাইন পিএইচ সমৃদ্ধ। বৃষ্টির পানির মধ্যে কিছু অণুজীব থাকে যারা তাদের বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিটামিন বি-১২ তৈরি করে। সুতরাং আপনার যদি ভিটামিনের অভাব থাকে; তাহলে নিয়মিত ১০-১৫ মিনিট বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন। তবে বৃষ্টিতে ভেজার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালোমতো গোসল করে নিতে হবে।

৫। দেহের টক্সিন উপাদান দূর করে

বৃষ্টির পানি পান করলে শরীরে জমে থাকা টক্সিন বের হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। এটি রক্তের পিএইচ লেভেলকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে স্বাভাবিকের ঘরে। ফলে শরীরে অ্যাসিডিটির মাত্রা কমে যায় এবং রোগের প্রকোপ কমে আসে।

৬। শ্বাস-প্রক্রিয়া উন্নত করে

বৃষ্টির সময় হাওয়া-বাতাস বিশুদ্ধ থাকে। তাই এ সময়ে দেহে প্রবেশ করা বায়ু আমাদের শ্বাসপ্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়। সেই সঙ্গে দূর হয় শরীরে অবস্থান করা বাজে টক্সিন।

৭। কানের সমস্যার সমাধান

বৃষ্টিতে ভিজলে কানের সব ধরনের সমস্যা দূর হয়। কান ব্যথা বা ইনফেকশন সারানোর ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি বেশ উপকারী। তবে মাত্রাতিরিক্ত ভিজলে বা বাতাস থাকলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। ১০-১৫ মিনিটের বেশি ভেজা উচিত নয়। ভেজার পরপরই হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে ফেলতে হবে।

৮। মানসিক অবসাদ কমায়

বৃষ্টির সময় মাটির যে গন্ধ বের হয় তার ঘ্রাণ কখনো নাকে এসেছে? এই গন্ধ যতটা পারেন মন-প্রাণ ভরে শরীরের ভেতর নিন, দেখবেন মন আপনাআপনিই ভালো হয়ে যাবে। গবেষকদের ভাষায় এ গন্ধকে বলা হয় “পেট্রিকোর”। বৃষ্টি পড়লে মটিতে উপস্থিত একধরনের ব্যাকটেরিয়া বিশেষ এক ধরনের কেমিক্যাল ছড়ায়। যার ফলে এমন সোঁদা গন্ধ বেরোতে শুরু করে। আর এ গন্ধ মানসিক অবসাদ দূর করতে বেশ সহায়ক।

৯। হরমোনের ভারসাম্য

অনেকেই হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় ভুগে থাকেন। এ সমস্যারও সমাধান পাবেন নিয়মিত বৃষ্টিতে ভিজলে।

১০। চুলকানির সমাধান

নানা কারণে অনেকেই চর্মরোগে ভুগে থাকেন। আপনি কি জানেন, ত্বকের বিভিন্ন ফুসকুড়ি ও চুলকানির সমাধান আছে বৃষ্টির পানিতে? বৃষ্টির পানিতে ভিজলে বা নিয়মিত গোসল করলে চুলকানি ও ত্বকের খসখসে ভাব চলে যায়। একইসঙ্গে শরীরেও ঠান্ডা ও প্রশান্তির অনুভূতি অনুভব হয়।

১১। মন খুশি হয়

বৃষ্টিতে ভিজলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরাটোনিন নামক হরমোনোর ক্ষরণ হয়, যা আমাদের আনন্দের অনুভূতি দেয়। এ কারণে বৃষ্টিতে ভিজলে সব দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সুযোগ পেলেই ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন।

তবে মনে রাখবেন, টানা ১৫ মিনিটের বেশি বৃষ্টিতে ভিজবেন না। এতে বৃষ্টির শীতল পানিতে আপনার সর্দি-জ্বর হওয়ার শঙ্কা হতে পারে। বৃষ্টির পানিতে ভেজার শুধুই উপকারিতা পেতে ১০ মিনিট বৃষ্টির পানিতে ভিজতে পারেন।

নবান্ন টিভি