২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে চলতি বছর ১ জুলাই পর্যন্ত সাড়ে ১৯ মাসে কীর্তনখোলা ও সুগন্ধা নদীতে যাত্রী এবং তেলবাহী নৌ-যানে চারটি বড় ধরনের আগুনের ঘটনা ঘটে।
এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৫ জন।
গত এক দশকে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে ঝালকাঠি ও বরগুনা রুটে নৌ-যান ডুবির ঘটনা হ্রাস পেয়েছে।
কিন্তু বড় ধরনের এ দুর্ঘটনা এবং এতে প্রাণহানির ঘটনা অঞ্চলটির মানুষ ভোলেননি।
বিশেষ করে ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে
অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আজও তারা করে বেড়াচ্ছে সুগন্ধা তীরের মানুষদের।
চলতি মাসে এ নদীতেই দুটি বড় বিস্ফোরণ ও তেলের ট্যাঙ্কারে ধরা আগুন, আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষে।
এ দুটি ঘটনার পর সুগন্ধা তীরের মানুষ নদীতে ফায়ার স্টেশন স্থাপনের যেমন দাবি জানিয়েছেন,
তেমনি ফায়ার সার্ভিসও নৌ-যানে ইনবিল্ট ফায়ার ফাইটিং সিস্টেমের ওপর জোর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এতে ট্যাঙ্কারটির ১৩ স্টাফের মধ্যে ৮ জন দগ্ধ হন।
ঘটনার তিনদিনে মৃত্যু হয় ৬ জনের। এ ঘটনার ৩৯ দিন পর ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এর সূত্রপাতও ঘটে ইঞ্জিনরুম থেকে। প্রাণহানি ঘটে ৪৯ জনের; আহত ও দগ্ধ হন প্রায় শত যাত্রী।
এ ঘটনার ঠিক ১৬ মাস পর চলতি বছর ১১ মে বিকেলে কীর্তনখোলা নদীতে নোঙর করে থাকা এমটি এবাদী-১ নামে একটি তেলের ট্যাঙ্কারের ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণ ঘটে। নিহত হন ৬ জন।
এই ঘটনার ঠিক ৫০ দিনের পর গত ১ জুলাই দুপুরে সুগন্ধা নদীতে নোঙর করে রাখা সাগর নন্দিনী-২ ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ ও পরে আগুনের ঘটনা ঘটে।
এর দুদিন পর উদ্ধার অভিযান শেষ করার এক ঘণ্টার মাথায় গত সোমবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় সাড়ে ছয়টার দিকে একই জাহাজে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
আর উভয় ঘটনা মিলিয়ে মোট ৪ জনের মৃত্যু ও ১৯ জন গুরুত্বর আহত হন।
এর আগে ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর তেলবোঝাই সাগর নন্দিনী-২ ভোলার মেঘনা নদীতে অপর একটি নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে গিয়েছিল।
অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা কমাতে সচেতনতার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ সাগর নন্দিনী-২ তেলবাহী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স)
পরে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমত এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে আমাদের অসচেতনতায়।
দ্বিতীয়ত, ইনবিল্ট ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম আমাদের শিপগুলোয় থাকা উচিত, সেগুলো না থাকাও দায়ী।
যেকোনো ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয় এবং কমিটির প্রতিবেদনে আমরা একটি সুপারিশমালাও দিয়ে থাকি।
আমরা সবসময় বলি অগ্নিনির্বাপণের জন্য ভ্যাসেল এরিয়া অর্থাৎ আয়তন এবং ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ইনবিল্ট ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম থাকার বিষয়ে।
ইনবিল্ট ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম যেটা থাকা উচিত সেটার ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি যারা স্টাফ আছেন তারা ফায়ার ফাইটিংয়ের ওপর যাতে প্রশিক্ষণ নেন
এবং ড্রিল করে- সেদিকেও জোর দিই আমরা। অন্তত প্রতি ৬ মাসে একবার হলেও তারা যেন ড্রিল করেন। কিন্তু এসব কিছুর ওপরেই সচেতনার অভাব।
যদিও অনেকে মনে করছেন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো সঠিকভাবে কাজ না করায় একের পর এক যান্ত্রিক বিপর্যয় হচ্ছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূল অধ্যয়ন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, বিস্ফোরণ সাধারণত অক্সিজেন,
জ্বালানি-ইবিয়েশন বা আগুনের উৎস-এ তিনটির সমন্বয়ে ঘটে থাকে। নৌযানে অগ্নিকাণ্ডের পর্যালোচনায় এ তিনটি ঘটনার সম্মিলন পাওয়া যায়।
নৌ-যানে বিস্ফোরণ বা বিপর্যয় ঠেকাতে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলোর তৎপরতা, সক্ষমতা ও পদ্ধতিগত প্রয়োগ আরও বাড়াতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।