রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ এইচএসসি পরীক্ষার্থী তাহসিন হোসাইনের (১৭) মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
এতে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকসহ মোট সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (২৬ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে ওই কিশোরের বাবা মনির হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী তানভীর আহমেদ সজীব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা গ্রহণ করে আদালত ধানমণ্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন।
মামলায় আসামিরা হলেন,
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের সার্জন ডা. মো. সাইফুল্লাহ,
সহকারী সার্জন ডা. মাকসুদ, ডা. সাব্বির আহমেদ, ডা. মোশাররফ, ডা. কনক ও হাসপাতালের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. শাহজাহান প্রমুখ।
গত শুক্রবার (২৩ জুন) ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাহসিন হোসাইনের মৃত্যু হয়।
নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. মনির হোসেন বলেন,
আমার ছেলে মার্চ মাসে পেটের ব্যথায় ভুগছিল। পরে ঢাকা মেডিকেলে গেলে চিকিৎসকরা অপারেশনের পরামর্শ দেন।
পরে মার্চের ২৭ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২৮ তারিখ সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাইফুল্লাহ প্রথম অপারেশন করেন।
কিন্তু অপারেশনের পরেও আমার ছেলের রক্ত বের হচ্ছিল। কিন্তু সেটা বলার পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
পরে ৬ এপ্রিল সকালে একই চিকিৎসক আবারও অপারেশন করেন। তবুও রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি।
এমনকি অপারেশন করে পেট থেকে নাড়ির একটা অংশ কেটে ফেলে দেয়। এভাবেই গত তিন মাস ধরে চিকিৎসা চলছিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ করে মনির হোসেন আরও বলেন,
গত তিন মাসে আমার ছেলে শরীরে ১৪৪ ব্যাগের বেশি রক্ত দেওয়া হয়েছে, ৯০ ব্যাগের বেশি প্লাজমা দেওয়া হয়েছে।
এই সময়ে তার শারীরিক কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ধীরে ধীরে খারাপ হয়েছে।
অথচ কোনো রকম জবাবদিহি ছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে।
মৃতের মা তাজমিন ভূইয়া বলেন,
আমার ছেলের পেট ব্যথা ছিল। সে হাঁটাচলা সবকিছুই করত। এই অবস্থায় আমরা ল্যাবএইডের ডা. সাইফুল্লাহকে দেখাই।
তিনি জানান তার অবস্ট্রাক্টিভ স্মল গাট বা নাড়ির প্যাঁচ রয়েছে। যার কারণে তার পেটে ব্যথা এবং মলত্যাগে সমস্যা হচ্ছে। অপারেশনের করতে হবে।
তাজমিন আরও বলেন,
আমার ছেলের পেটের সেলাই করা স্থান ফাঁকা হয়ে ময়লা বের হতো। ফলে প্রচণ্ড ব্যথা হতো। তারাও খেতে দেয়নি।
আমার ছেলেও খেতে পারেনি এই তিন মাস। সে শুয়ে শুয়ে বিভিন্ন রান্নার ছবি দেখত। আর চিন্তা করত, সুস্থ হয়ে সে ইচ্ছামত খাবে।
কিন্তু ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই। এটা অপমৃত্যু।
আমার ছেলে একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবার। কিন্তু আজ সব স্বপ্ন নিভে গেল।