রাজধানীতে এবার দেখা মিললো ‘বয়ান পার্টি’র। ছয় থেকে আটজনের এ পার্টিতে আছেন একজন মুরব্বি, যাকে সাজানো হয় পীর।
কথিত ওই পীরকে ঘিরে গুণগান করতে থাকে বাকিরা। এ ফাঁকে টার্গেট খুঁজতে থাকেন কেউ কেউ।
পথচারী কেউ এগিয়ে এলে তাকে বোঝানো হয় পীরের পারদর্শিতা।
গত ২২ জুলাই, সকাল সাড়ে ৬টায় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় এক ব্যক্তির সঙ্গে যারই দেখা হচ্ছে, হাত মেলানোর পাশাপাশি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
বোরকাপরা মহিলার মাথায়ও হাত বুলিয়ে দেন তিনি। পাশের দুটি লোক জানান, এ মুরব্বি অত্যন্ত পরহেজগার, কামেল লোক।
যে কোনো সমস্যা তিনি সমাধান করতে পারেন। অনেকক্ষণ তাদের কথা বলতে দেখা গেল।
পেছনে না তাকিয়ে ৩০ কদম হেঁটে বাড়ি ফেরার নির্দেশ দিয়ে কথিত কামেল লাপাত্তা।
বাড়িতে গিয়ে ওই নারী বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
কথা হয় ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে। থানায় মামলা করার পর তিনি অভিযোগ নিয়ে আসেন গোয়েন্দা কার্যালয়ে।
জানান, সেদিন চলার পথে কথিত ওই পীরের সাথে তার দেখা হয়। সেখানে ওই পীর তার ঈমান পরীক্ষা করার কথা বলেন।
বিষয়টি কারো কাছে বললে তার সন্তানদের ক্ষতি হবে বলেও জানানো হয়।
এরপরই ওই নারী বাসায় গিয়ে এক লাখ ১৮ হাজার টাকা এবং কানের এক জোড়া স্বর্ণের দুল এনে পীরের হাতে তুলে দেন।
পুলিশ বলছে, তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে।
৬ থেকে ৮ জনের একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই চক্রটিকে পুলিশ বলছে ‘বয়ান পার্টি’।
ভোরবেলা হাঁটতে বের হন এমন নারীরাই হয় চক্রটির মূল টার্গেট।
একজনকে পীর সাজিয়ে চক্রের সদস্যরাই তার প্রশংসা করতে থাকেন টার্গেট ব্যক্তির কাছ থেকে সব হাতিয়ে নেয়ার জন্য।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ৬ থেকে ৮ জনের একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এ চক্রটির কাজের ধরন জানাতে গিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন,
‘চক্রের সদস্যদের কাছে কেউ আসলে তারা বলেন, বড় কোন কিছু পাওয়ার আশায় ছোট স্বার্থ ত্যাগ করো। তোমার কাছে যা আছে, তাই দিয়ে দাও।
আবার বলে, তোমার বাসায় কী আছে, তাই নিয়ে আসো। এমন সুযোগ আর পাবা না।
তোমার জিনিস দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যাবে। তখন কেউ কেউ বিশ্বাস করে সব দিয়ে দেয়।’
তাই সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, ‘বয়ান পার্টি’র সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।