বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে ও কারখানা বন্ধ থাকার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
শনিবার (২৯ জুলাই) সকালে উপজেলার তারাবো পৌরসভার বরপা এলাকায় অবস্থিত অন্তিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানায় এ শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৯টার দিকে অন্তিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানার সামনে শ্রমিকরা অবস্থান নিতে শুরু করেন।
একপর্যায়ে শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এসময় সড়কের দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে শিল্প পুলিশের সহকারী সুপার জিজে বিশ্বাস,
রুপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এফ এম সায়েদ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ইন্সপেক্টর নয়নসহ পুলিশ কর্মকর্তারা
ও স্থানীয় কমিশনার জাকারিয়া মোল্লা শ্রমিকদের বুঝিয়ে শুনিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
অন্তিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানার শ্রমিকরা জানান, প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কর্মচারী এ পোশাক কারখানায় কর্মরত রয়েছেন।
কোরবানি ঈদের আগে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন। তখন শ্রমিকদের চাপের মুখে পড়ে মালিকপক্ষ ১৫ দিনের বেতন ভাতা পরিশোধ করেছিলেন ।
১৫ দিনের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে বলেছিলেন ঈদের পর শ্রমিক কর্মচারীদের তিন মাসের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করে দিবেন।
শ্রমিকরা ছুটি কাটিয়ে কারখানায় যোগদান করতে গেলে গিয়ে দেখেন কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জানিয়ে দিয়েছেন, বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস লাইন কাটা রয়েছে। গ্যাস লাইন সংযোগ দিলেই কারখানা চালু করা হবে।
দিনের পর দিন এভাবে প্রায় একমাস বের হয়ে গেলেও কারখানার মালিকপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং কারখানা চালু করতে পারেনি।
এতে করে নিরীহ এসব শ্রমিক কর্মচারীরা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা বকেয়া বেতনভাতা ও কারখানা চালুর দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে শ্রমিক সুমাইয়া আক্তার, আয়েশা আক্তার, সোলেমা আক্তার, ওবায়দুল, শহিদুল্লাহসহ আরো কয়েকজন বলেন, বাড়িওয়ালারা ভাড়ার টাকার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছেন।
মুদি-মনোহরি দোকান থেকেও পাওনা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন বাসাপড়ার টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বাসা ছেড়ে দিতে হবে।
দোকানের পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে বাকিতে আর সদায়ও দেবে না। এখন আমরা কোথায় যাব, কী করব, কী খাবো।
আমাদের পাওনা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
অন্তিম নিটিং ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানার ডাইরেক্টর দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাময়িকভাবে সমস্যা হওয়ায় এ অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী আগস্টের ৭ তারিখে শ্রমিকদের বকেয়া জুন মাসের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হবে। ১০ তারিখে স্টাফদের বেতন দেওয়া হবে।
জুলাই মাসসহ বকেয়া বেতন ভাতা দেওয়ার তারিখ পরবর্তিতে জানানো হবে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে গ্যাস সংযোগ দিয়ে কারখানা চালু করা হবে।
রুপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এফ এম সায়েদ বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।