অনতিবিলম্বে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্প এলাকার জলাবদ্ধতার পানি অপসারণ করা না হলে ময়লা পানিতে নেমে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) শামীম ওসমান।
রোববার (২ জুলাই) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল পাম্প স্টেশন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন,
‘আমার এলাকার ৩০-৪০ লাখ লোক এখানে থাকে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ময়লাসহ এমন কোনো বিষাক্ত ময়লা নেই যা এই পানিতে নেই।
তারা প্রধানমন্ত্রীর ওপর বিশ্বাস রাখেন, আমাদের ওপরও বিশ্বাস রাখেন।
আমি গলা পর্যন্ত পানিতে নেমে দাঁড়িয়ে থাকবো।’
তিনি বলেন,
‘ঈদের সময় আমি অসুস্থ থাকায় সেখানে যেতে পারিনি।
আমার ছেলেকে পাঠিয়েছি এবং তার টিম নিয়ে এলাকাগুলোতে গিয়েছে।
ও এসে আমাকে ছবি দেখিয়ে বললো, মানুষের যে অবস্থা সেখানে জীবনযাপন করা মোটেও সম্ভব না।
সেখানে মানুষকে কোরবানি করতে হচ্ছে। আমি কষ্টে ঈদের দিন সারাদিন বের হইনি। কারও সঙ্গে কথাও বলিনি।
আমার প্রত্যাশা আছে কারণ পানিসম্পদ উপমন্ত্রী আমাকে কথা দিয়েছেন। বলেছেন কয়েকটা দিন সময় দিন।
তা নাহলে আমি নিজে যে যে এলাকায় পানি থাকবে সেখানে ময়লা পানিতে নেমে প্রতিবাদ জানাবো।’
তিনি আরও বলেন,
‘ডিএনডি প্রজেক্টের জন্য ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
মূলত করোনা ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই টাকাটা আসতে দেরি হয়ে গেছে।
তবে চলতি জুলাই মাসেই টাকাটা আসবে।
তাদের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে।’
শামীম ওসমান বলেন,
‘পানির কানেকশনটা সবসময় ড্রেনের সঙ্গে থাকতে হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ পুরোটাইতো সিটি করপোরেশনের এলাকা।
সিটি করপোরেশনের কাছে আমার অনুরোধ যেন খুব শিগগির সিদ্ধিরগঞ্জের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করা হয়।’
ঈদের আগের দিন থেকে টানা কয়েকদিনের বর্ষণে ডিএনডির অভ্যন্তরে সিদ্ধিরগঞ্জ,
পাগলা, ফতুল্লা, কুতুবপুর, মুন্সিবাগ, শহীদবাগ, মিজমিজি, কদমতলী, কদমতলী পশিম,
কালু হাজী রোড, ধনু হাজী রোড, ফতুল্লার শান্তিধারা, গিরিধারা, জালকুঁড়ি,
ভূঁইগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে চরম বিপাকে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।
১৯৬২ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরার (ডিএনডি) মধ্যকার ৫৮.২২ বর্গ কিলোমিটার জলাভূমিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ,
বর্তমানে বাঁধটি ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা-যাত্রাবাড়ী এলাকার চারদিকে যান চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকায় সেচের জন্য ৫৫.২ কিলোমিটার সেচখাল ও ৪৫.৯০ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল খনন করা হয়েছিল।
ডিএনডি এলাকাটিতে নিম্নআয় থেকে মধ্যআয়ের প্রায় অর্ধকোটি লোক বসবাস করেন।
এছাড়া রয়েছে অসংখ্য উপাসনালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছোট-মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
প্রয়োজনের তাগিদে ধানক্ষেতের আইল দিয়ে চলার পথকে ভিত্তি করে অথবা এলাকাবাসীর সুবিধা অনুযায়ী অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা গড়ে উঠেছে,
যা পরবর্তী সময়ে পাকা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। ওইসব রাস্তার দুই পাশে সুউচ্চ অট্টালিকা গড়ে উঠেছে।
অনেক এলাকায় রাস্তার পাশে ড্রেন আছে, কিন্তু ড্রেনের পাশের বাড়িগুলো থেকে অপচনশীল দ্রব্যাদি দীর্ঘদিন ড্রেনে ফেলার কারণে
এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ড্রেনগুলো ময়লা, বালি ও মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে।
ডিএনডি এলাকাটির চারদিকে উঁচু বাঁধ থাকায় পানি বের হয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
বাঁধের মধ্যখানের নিচু এলাকায় প্লাবিত পানি নিষ্কাশনের জন্য শিমরাইলে অবস্থিত একটিমাত্র পাম্পস্টেশন রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।
এছাড়া খালটির বিভিন্ন স্থানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ড্রেনের পানি পাম্পস্টেশন পর্যন্ত পৌঁছার কোনো উপায় না থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দৃষ্টি আকর্ষণীয় বক্তব্যের পর সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডিএনডি এলাকা পরিদর্শন করে।
পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ডিএনডি ড্রেনেজ অ্যান্ড স্যুয়ারেজ ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প’ একনেকে উপস্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ডিএনডি বাঁধের মধ্যে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশার কথা বিবেচনা করে প্রকল্পটি অনুমোদন করেন।
প্রকল্প এলাকায় দখলকৃত খাল পুনরুদ্ধার করে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে সেনাবাহিনীকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরইমধ্যে প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ২৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।