পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের মোট ৪৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫২ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিপুল এই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরই ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বেনজীর, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে। নোটিশে আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা ও আয়ের বিবরণী কমিশনে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। দুদক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন গণমাধ্যমকে বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানে গঠিত অনুসন্ধানকারী টিম তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এবং মেজো মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্ণিত সম্পদ ছাড়াও অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে-বেনামে, দেশে-বিদেশে আরো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় তাঁদের দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা অনুসারে পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে নোটিশ জারির বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সে অনুসারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
৪৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
দুদকের অনুসন্ধান টিম সম্প্রতি তাঁদের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করেছে। সেখানে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৪৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫২ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীর আহমেদের নামে মোট ৯ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৫ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে মোট ২১ কেটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৩ টাকা, তাঁদের বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের নামে মোট আট কোটি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৬ টাকা এবং মেজো মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে চার কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
বেনজীর পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু যেভাবে
সর্বপ্রথম কালের কণ্ঠে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ এবং ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল পৃথক দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন দুটি প্রকাশের পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া পড়ে। মূলত এর পরই দুদক বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গত ২১ এপ্রিল বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরদিন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এক সংবাদ সম্মেলনে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরুর তথ্য জানান।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাতজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীরও ছিলেন।