জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মূল টার্গেট।
তবে তার বড় ছেলে শেখ কামাল ১৯৭৫ সালে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রথম শহীদ হন।
আর সবশেষে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে।
ছোট্ট রাসেল ভয়াবহ সেই সময়ে কেঁদে কেঁদে মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিল।
রাসেলকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
প্রবাসী লেখক ও গবেষক গোলাম মুরশিদ তার ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’ শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, শেখ কামালকে হত্যার পর মহিউদ্দিন ও তার সহযোগীরা বাড়িতে ঢুকে শেখ মুজিবকে খুঁজতে থাকে।
অবশেষে সামনের বারান্দায় দেখা গেল তাকে।
মুজিব হাতে পাইপ নিয়ে শান্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে দেখে মহিউদ্দিন ভয় পেয়ে গেলেন এবং তিনি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করতে পারলেন না।
তিনি শুধু বললেন, ‘স্যার, আসুন আমাদের সঙ্গে।’
সিঁড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু নামতে শুরু করে বঙ্গবন্ধু চিৎকার করে বলেন, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
এ সময় মহিউদ্দিনকে পাশে থাকতে বলে হুদা ও নূর স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে।
ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ডান হাতে পাইপ ধরে সিঁড়িতে পড়ে যান। খুনিরা তার বুকের ডান পাশে ও পেটে গুলি করে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও অভিযান শেষ হয়নি।
মহিউদ্দিন, হুদা ও নূর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আজিজ পাশা
ও মোসলেহউদ্দিন ল্যান্সার ও আর্টিলারি সৈন্য নিয়ে আসে।
পাশা তার সঙ্গীদের নিয়ে দোতলায় যায়।
সুবেদার ওহাব জোয়ার্দার আগে থেকেই সেখানে ছিল।
তারা শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও বাড়ির এক চাকরকে নিচে নিয়ে যায়।
পাশা ও মোসলেহউদ্দিন স্টেনগান দিয়ে বেগম মুজিব,
শেখ জামাল এবং কামাল ও জামালের স্ত্রীদের বেডরুমে গুলি করে।
পরে শেখ রাসেল মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে
পাশা একজন হাবিলদারকে রাসেলকে মায়ের কাছে নিয়ে যেতে বলে।
আর হাবিলদার রাসেলকে দোতলায় তার মায়ের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন তার লেখায় উল্লেখ করেন,
পৃথিবীতে যুগে যুগে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কিন্তু
এমন নির্মম, নিষ্ঠুর এবং পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড কোথাও ঘটেনি।
রাসেলকে হত্যার বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখেছেন,
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে রাসেলকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন ব্যক্তিগত কর্মচারী।
এ সময় ঘাতকদের হাতে আটক হন তারা।
আতঙ্কিত শিশু রাসেল তখন কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাবো’।
পরবর্তী সময়ে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন
‘আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন’।
কিন্তু ঘাতকরা ছোট্ট সেই শিশুকে মা, বাবা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী,
চাচা সবার লাশের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার শেষে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।