ভারতে লোকসভা নির্বাচন আগামী বছর। এরইমধ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ‘ইন্ডিয়া’ নামে ২৬ দলের জোট গঠন করে মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপিবিরোধীরা, শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
সাম্প্রতিক কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর বিরোধীদলগুলোর নতুন এই জোটের আত্মপ্রকাশে কিছুটা হলেও চাপে পড়বে ক্ষমতাসীনরা।
আর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা মোদি ম্যাজিক এবার কতটুকু কার্যকর হয়, সেটাও বিবেচনার বিষয়।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হঠাতে মরিয়া প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দল।
অনেকদিন ধরেই ভারতে বিজেপিবিরোধী একটি ঐক্য গড়ে তুলতে তৎপর রাহুল গান্ধী।
সেই লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ভালোভাবেই এগোচ্ছেন তিনি।
এরইমধ্যে এতে যুক্ত হয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, শিখসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট নেতারা।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী দলকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’ সংক্ষেপে ‘ইন্ডিয়া’ নামে বিজেপিবিরোধী বিশাল জোট গঠনের ঘোষণা দেয় কংগ্রেস।
বিজেপিবিরোধী এই মহাজোট নিয়ে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে ভারতের রাজনৈতিক মহলে। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
নতুন এই জোট গঠনকে ভারতের বিজেপিবিরোধী শক্তিগুলোর দিল্লীর মসনদে বসার আলোকবর্তিকা হিসেবেও দেখতে শুরু করেছেন অনেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
সেইসঙ্গে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানে এমনিই কিছুটা বেকায়দায় মোদি প্রশাসন।
অন্যদিকে,
ঠিক বিপরীত চিত্র কংগ্রেসের। সম্প্রতি কর্ণাটকে ভরাডুবির মধ্য দিয়ে বিজেপির শাসনের অবসান হয় দক্ষিণ ভারতে।
আর নিরঙ্কুশ জয়ে যেন রাজনীতিতে আগুনের গোলা হয়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকা কংগ্রেস।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয় নিয়ে বিজেপি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসলেও, চার বছরের মাথায় এসে পাল্টে যেতে শুরু করেছে দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
বদলে যেতে শুরু করেছে আগের সব হিসেব-নিকাশ।
কর্ণাটকের পর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
কংগ্রেসের সাম্প্রতিক উত্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ভারতজুড়ে রাহুল গান্ধীর পদযাত্রা কর্মসূচি।
ভারতজোড়ো যাত্রা নামে ওই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের আশার সঞ্চার করতে সক্ষম হন তিনি।
এবার বিজেপিবিরোধী ঐক্য গঠনে বিরোধীদলগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতেও মূল ভূমিকা সেই কংগ্রেসেরই।
শুধু তাই নয়, জোটের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে এরইমধ্যে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই তার দলের।
তার এমন বক্তব্য জোটের ঐক্যের স্বার্থে দলটির নমনীয়তার বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে করছেন অনেকে।
অন্যদিকে,
ভুলে গেলে চলবে না যে শুধু কেন্দ্রেই নয়, ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এখনও ১৫টির নেতৃত্বে রয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।
২০১৯ সালের সবশেষ জাতীয় নির্বাচনেও লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩শ’র বেশি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি।
ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজনৈতিক দলও তারা। ২০২১-২২ অর্থ বছরে দলটির ঘোষিত আয় ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন রুপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,
জাতীয় নির্বাচনে বিজেপির সবচেয়ে বড় শক্তি দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
তারা বলছেন,
বিধানসভা নির্বাচনে অন্য দলগুলোকে ভোট দেয়া ব্যক্তিরা জাতীয় নির্বাচনে কেবলমাত্র মোদিকে পছন্দ করেন বলেই বিজেপিকে ভোট দেন।
তাই বিজেপিবিরোধী ২৬ দলের জোটকে এখনই ‘পদ্মফুল ম্লান’ হয়ে পড়ার আলামত মনে করলে তা হবে বড় ভুল।
আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে কার পালে কতটুকু হাওয়া লাগবে, তার আলামত স্পষ্ট হতে আরও কয়েক মাস থাকতে হবে অপেক্ষায়।