রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্র বেলারুশের ওপর একযোগে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।
কারচুপি ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিতর্কিত জয়ের তিন বছর পূর্তির দিন বুধবার (৯ আগস্ট) এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
এদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে নির্বাসিত হাজার হাজার বেলারুশীয় লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।
বেলারুশে ১৯৯৪ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো।
দেশটিতে সবশেষ ২০২০ সালের ৯ আগস্ট প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রত্যাশিতভাবেই জয়ী হন লুকাশেঙ্কো।
তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়।
লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু সেই বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমন করে লুকাশেঙ্কোর নিরাপত্তা বাহিনী।
হাজার হাজার মানুষকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। অনেকেই প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যায়।
বুধবার (৯ আগস্ট) ছিল লুকাশেঙ্কোর বিতর্কিত নির্বাচনের তৃতীয় বার্ষিকী।
সেই উপলক্ষে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলো পশ্চিমারা।
পশ্চিমা একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে,
কারচুপির নির্বাচন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন কারণে বেলারুশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ও একাধিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।
বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়।
ক্ষমতার অপব্যবহার, বিরোধীদের দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিশ্চিত করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন,
‘মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া করে লুকাশেঙ্কোর ক্ষমতার অপব্যবহার,
বিরোধীদের দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত আট ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।’
ম্যাথিউ মিলার আরও জানান,
একই অভিযোগে লুকাশেঙ্কো প্রশাসনের আরও অন্তত ১০১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসানিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই কর্মকর্তারা বেলারুশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন এবং সেগুলোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।
কানাডার বৈশ্বিক সম্পর্ক বিষয়ক বিভাগ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা এক বিবৃতিতে জানায়,
বেলারুশে পদ্ধতিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে দেশটির ৯ ব্যক্তি ও সাত প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়,
‘বেলারুশে চলমান সামগ্রিক ও সিস্টেমেটিকভাবে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে, তার ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়,
বেলারুশে যারা ইউক্রেন-সংকটের বিষয়ে রাশিয়াকে সমর্থন করছে, তাদের লক্ষ্য করেই মূলত এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি বলেন, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের কারও দায়মুক্তি বা ছাড় নেই।’
তিনি জানান,
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ড একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
এদিকে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ’তে লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে বিশাল মিছিল বের করেছে হাজার হাজার প্রবাসী বেলারুশীয়।
প্রতিবেশী দেশ লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসেও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।