জিরো কোভিড নীতি থেকে সরে আসার পর এখনও ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি চীনা অর্থনীতি ।
বিশ্বের প্রায় সব দেশ যখন মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে ব্যস্ত, তখন চীন ব্যস্ত দ্রব্যমূল্যের পতন ঠেকাতে।
এতে দেশটির অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।
তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে গত জুলাই মাসে উল্টো জিনিসপত্রের দাম কমেছে।
অর্থনীতির পরিভাষায় যা ‘ডিফ্লেশন’ হিসেবে পরিচিত।
দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাসে দেশটিতে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
এ ছাড়া কমেছে কারখানা ও অন্যান্য ব্যবসার মানও।
পাশাপাশি আবারও সংকট দেখা দিয়েছে চীনের আবাসন খাতে।
চীনে কমেছে খাবার ও গাড়ির দাম। তেমন একটা বৃদ্ধি দেখা যায়নি পোশাক, জুতা ও স্বাস্থ্যসেবায়ও।
২০২২ সালের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইতে উৎপাদকদের আয় কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক চীন বিভাগের প্রধান এশ্বর প্রসাদ বলেন, চীনের অর্থনীতি ডিফ্লেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
পাশাপাশি ব্যবসায়িক অবস্থা পুনর্গঠন করতে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২১ সালে জাপানের ভোক্তা মূল্যসূচক কমেছিল।
এরপর এ অবস্থায় পড়ল চীন। জি-২০-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল চীনই এখন এ পরিস্থিতির শিকার।
গত জুলাইতে দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তা ফু লিংহুই জানিয়েছিলেন, ‘চীনে কোনো মূল্যস্ফীতি নেই, ভবিষ্যতেও হবে না।’
এদিকে বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে চীনের রফতানির পরিমাণ কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির আগে এত কম রফতানি হার আর দেখা যায়নি।
রফতানির পাশাপাশি দেশটিতে আমদানির চাহিদাও কমে এসেছে।
জুলাইয়ে আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।
চীনা প্রতিষ্ঠান পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝেং ঝিইউ বলেন, মূলত দেশের বাজারে পণ্যের চাহিদা আগের তুলনায় কমে এসেছে। এ কারণে আমদানির পরিমাণও কমছে।
চীনা রাজস্ব বিভাগের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, টানা পাঁচ মাস ধরে ডলারে আমদানির পরিমাণ কমেছে চীনে।
যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি বছর ঘুরে দাঁড়াবে চীনা অর্থনীতি, কিন্তু বাস্তবে এখনও আশার আলো দেখাতে পারছে না দেশটি।
তবে দেশটির অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীন ভবিষ্যৎ অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
দেশের বাজারকে আপাতত মন্দা মনে হলেও কম মূল্যে পণ্য নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের আরও লাভের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল ও সৌদি থেকে ইউয়ানে জ্বালানি কিনে পরবর্তী সময়ে বড় অর্থনৈতিক সূচকের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে চীন।
এদিকে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মান আগস্টে আরও হ্রাস পেয়েছে।
এটিকে ভালো লক্ষণ উল্লেখ করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক কেন চিয়ুং বলেন, ‘দুর্বল মুদ্রা রফতানির জন্য সুবিধাজনক।’
এতে অন্যরা ইউয়ানে ব্যবসা করতে আরও উৎসাহী হবে।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউয়ানের সর্বজনীন ব্যবহার বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।