দক্ষিণ আমেরিকার দেশ উরুগুয়ের রাজধানী মন্টিভিডিওতে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
শহরটিতে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে পানি। শহরটিতে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তা দুই-একদিনের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে।
এর ফলে চরম বিপাকে পড়েছে রাজধানীর প্রায় ১৮ লাখ বাসিন্দা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে,
গত ৭৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় খরার মোকাবিলা করছে উরুগুয়ে।
আর এ খার থেকে বেরিয়ে আসতে লড়াই করে যাচ্ছে দেশটির জনগণ।
কিন্তু সম্প্রতি এই রিজার্ভারের পানির স্তর স্বাভাবিক মাত্রার অনেক নিচে নেমে গেছে।
গত সপ্তাহে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানান,
দেশটিতে যে পরিমাণ পানি আছে তা দিয়ে আর মাত্র সাত থেকে ১০ দিন চলবে।
এরপর প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। শহরটিতে যে পরিমাণ আছে তা দিয়ে আর মাত্র দুই-একদিন চলতে পারে।
বহু বছর ধরেই খরা ও উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো।
এবার উরুগুয়েতেও খরা দেখা দিয়েছে। এর ফলে দেশজুড়ে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে রাজধানীবাসী। শহরের জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেছে।
পানির জন্য মাঝে মাঝেই বিক্ষোভ করছে শহরবাসী।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রুপ নিয়েছে,
পানির ঘাটতি পূরণের জন্য রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে কূপ খনন শুরু করছে সরকার।
দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পানি কোম্পানি অবরাস স্যানিটারিয়াস দেল এস্তাদো (ওএসই) গত জুন পর্যন্ত সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য মিঠা পানির সঙ্গে লবণাক্ত পানি মেশানো শুরু করে।
এ নিয়ে শহরের বাসিন্দারা উদ্বেগ জানিয়েছেন।
আর এই মিশ্রিত পানি বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের জন্য আরও বেশি উদ্বেগ তৈরি করেছে।
যখন দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দেশ হিসেবে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা দিচ্ছে উরুগুয়ে ঠিক তখনই দেশটিতে দেখা দেয় পানি সংকট।
যা দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির রাজনীতিতেও উত্তেজনা তৈরি করছে।
২০০৫ সালের নিরাপদ পানিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান সংশোধনী করা হয়।
যদিও দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন,
মিশ্র পানি বেশিরভাগ মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
তিনি জানান, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগসহ যারা অন্যান্য জটির রোগে ভুগছেন তারা এ পানি ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
বিশেষজ্ঞরাদের মতে,
তারপর উপর বেশিরভাগ পানিই ব্যবহার হয়ে যাচ্ছে কৃষ্টি-ব্যবসায়।
চলতি সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে জীববিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মারিয়ানা মেরহফ বলেন,
মন্টেভিডিওতে প্রায় ৮০ শতাংশ মিঠা পানি কৃষি ও বনায়ন খাতে ব্যবহৃত হয়।
তিনি আরও বলেন,
‘তাই আমরা অবশ্যই বলতে পারি উরুগুয়ের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের পানির তীব্র সংকট।
কারণ শিল্পে পানি ব্যবহার করা হয় তে ব্যক্তিগত ব্যবহারে জন্য পানি খুবই সীমিত।’
এমন পরিস্থিতিতে গত জুন মাসে উরুগুয়ের সরকার পানি সংকট নিয়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে।
সরকার শুধু বোতলজাত পানির ওপর কর ছাড় দেয় ও নতুন জলাধার নির্মাণেরও নির্দেশ দেয়।
তারপরও পানি সংকট কমেনি, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস ল্যাকেলে পাউ বলেছেন,
তার সরকার পানি সংকট সমাধানে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করতে বিকল্প উৎসের সন্ধান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিশ্বব্যাপী পানির ঘাটতি
শুধু উরুগুয়ে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এরই মধ্যে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্য আফ্রিকা, পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চলে পানি সংকট চরম রূপ নিয়েছে।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন মতে,
বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষ প্রতিবছর অন্তত এক মাস পানি সংকটে ভুগছেন।
গত মার্চে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে মাত্রাতিরিক্ত পানির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানি সংকটের ‘আসন্ন ঝুঁকি’ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,
অতিরিক্ত পানি ব্যবহার ব্যবহার ও লাগামহীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জেরে বিশ্ব এখন ‘অন্ধভাবে এক বিপজ্জনক পথে হাঁটছে।’
মার্চে নিউইয়র্কে পানি নিয়ে জাতিসংঘের এক সম্মেলনে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন,
পানির অপচয়, দূষণ ও লাগামহীন উষ্ণায়ণের জেরে দ্রুত পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে।
ইউএন ওয়াটার অ্যান্ড ইউনেস্কোর প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়,
অতিরিক্ত ব্যবহার এবং দূষণের কারণে পানির ‘দুষ্প্রাপ্যতা প্রকট হয়ে উঠছে।’
অন্যদিকে বিশ্বের উষ্ণায়ণের ফলে যেখানে প্রচুর পানি পাওয়া যায় ও যেখানে জল সংকট রয়েছে, এই দুই জায়গাতেই কোনো কোনো মৌসুমে পানির ঘাটতি বেড়ে যাবে।