চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খালি পড়ে আছে বেশির ভাগ পেঁয়াজের মোকাম। সরবরাহ সংকটে এই অবস্থা বলে জানান আড়তদাররা।
যার প্রভাবে গত এক সপ্তাহে পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।
দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এক সপ্তাহ ধরে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমে অর্ধেকে নেমেছে।
যেখানে প্রতিদিন বাজারে ট্রাকে ট্রাকে পেঁয়াজ ঢুকত, সেখানে এখন হাতে গোনা কয়েকটি ট্রাক আসছে।
বেশির ভাগ দোকান ও মোকামই খালি পড়ে আছে। এতে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দেয়ায় গত সপ্তাহ থেকে ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যটির দাম।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) খাতুনগঞ্জে পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫থেকে ৪৮ টাকা দরে।
এ বাজারে গুটিকয়েক দোকানে দেশি পেঁয়াজের দেখা মিলেও ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহও তেমন একটা নেই।
পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ না থাকায় দামটা একটু বাড়তি।
মৌসুমের এ পর্যায়ে এসে কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের মজুত শেষ হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
সেই সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়তি হওয়ায় সেখান থেকেও সরবরাহ কমেছে।
এই দুই কারণে বাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন বেচাবিক্রি কম। পাশাপাশি পেঁয়াজের সরবরাহও কম।
তা ছাড়া চাহিদা অনুসারে সরবরাহ না হওয়ায় দাম বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, কয়েক বছর ধরে দেশে বার্ষিক পেঁয়াজ উৎপাদন কমবেশি ৩৫ লাখ টন।
এদিকে চলতি বছরের জুনে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন হয়ে উঠলে সরকার আমদানির অনুমতি দেয়।
কাজেই এটি স্পষ্ট যে দেশে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে দাম নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর মনিটরিংয়ের কথা বলছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
চট্টগ্রামে মোকাম খালি পড়ে থাকলেও প্রতিদিনই দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে টনে টনে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক ঢুকছে।
আমদানি কিছুটা বেড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে বন্দরেও দাম কিছুটা বেশি।
ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই দাম ঊর্ধ্বমুখী।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, সপ্তাহ ব্যবধানে ভোমরা, হিলি ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি দ্বিগুণ বেড়েছে।
সাধারণত আমদানি বাড়লে দাম কমে আসে, কিন্তু পেঁয়াজের বাজারে দেখা মিলছে উল্টো চিত্র।
সরবরাহ বাড়লেও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
বর্তমানে স্থলবন্দরের বাজারগুলোয় প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত।
আর প্রতি টনে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাইকার ও ক্রেতারা।
এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
কাল প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দিয়ে কিনেছি।
এক দিন না যেতেই আজ ৩৯ টাকা দরে কিনেছি।
পেঁয়াজের বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
আমদানিকারকরা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাই আমাদেরও বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।’
ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ার অভিযোগ করে এক ক্রেতা বলেন,
সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তারা গুদামে পণ্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।
গুদামে পেঁয়াজ পচে নষ্ট হবে। কিন্তু তারা পেঁয়াজ বাজারে ছাড়বে না।
এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের বাজারে কোনো পণ্যের চাহিদা বাড়লে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কৌশলে দাম বাড়িয়ে দেয়।
এ ছাড়া বেশি দামে আমদানি করায় দামও কিছুটা বাড়তি বলে অজুহাত দিচ্ছেন তারা।
এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারতীয় রফতানিকারকরা আমাদের জানিয়েছেন যে তাদের ওখানে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কম, তাই দাম বেশি।’
বন্দর সূত্রমতে, গত এক সপ্তাহে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় ৭ হাজার ৭৫৩ মেট্রিক টন, ভোমরা দিয়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বেনাপোল দিয়ে ৪৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।