মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুশ মুদ্রা রুবলের মান কমতে কমতে গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে ঠেকেছে।
তাই দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করেছে।
বেশ কিছু সময় ধরেই মান হারাচ্ছে রুবল। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৪ আগস্ট) এক ডলার সমান ১০১ রুবল ছুঁয়ে যায়।
যার কারণে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি জরুরি সভা ডাকতে বাধ্য হয়।
ব্যাংক অব রাশিয়া জানিয়েছে,
তারা মূল্যস্ফীতি রোধ করতে সুদের হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগস্টে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে।
মূলত, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্রমবর্ধমানভাবে আমদানি এবং সেই তুলনায় কম রফতানি আয়ের ফলে রাশিয়ার চলতি হিসাব দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা দেশটির অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
ব্যাংক অব রাশিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে,
‘অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদার প্রবৃদ্ধি উৎপাদন সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অন্তর্নিহিতভাবে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বেড়ে গেছে।
পাশাপাশি আমদানি উচ্চ চাহিদার কারণে রুবলের বিনিময় হারের গতিশীলতার ওপর প্রভাব পড়েছে।’
যদিও মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে, তারপরও এর হার ২০২৪ সাল নাগাদ ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের জেরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কয়েক দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকে ডলারের তুলনায় সামগ্রিকভাবে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মান হারিয়েছে রুবল।
সোমবার (১৪ আগস্ট) এক ডলার সমান ১০১ রুবল ছুঁয়েছে।
এর আগে গত বছরের মার্চে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবলের মান রেকর্ড ১২০-এ নেমেছিল।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডলারের তুলনায় রুবল প্রায় ২৫ শতাংশ মান হারিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) যদিও এর মান কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে।
তবে মুদ্রাটি এখনও আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় দুর্বল।
এর আগেও আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়িয়েছে ব্যাংক অব রাশিয়া।
যদিও কিছু সময় পরেই সেটি কমিয়ে আনা হয়।
এর আগে গত সপ্তাহে অস্থির দ্রব্যমূল্য থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য বাজেট ব্যবস্থার অধীন দেশীয় বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা কেনা বন্ধ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল ব্যাংক অব রাশিয়া।
এদিকে রুবলের এই ব্যাপক দরপতন সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মাকসিম ওরেশকিন মুদ্রাটির স্থিতিশীল হওয়া নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।
তিনি জানান,
বর্তমানে বিনিময় হার মৌলিক স্তর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে নেমে এলেও অদূর ভবিষ্যতে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন,
রুবলের দুর্বল অবস্থান অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরকে জটিল করে তোলার পাশাপাশি জনসংখ্যার প্রকৃত আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তাই রাশিয়ার অর্থনীতির স্বার্থে রুবলের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার প্রয়োজন বলে মনে করেন ওরেশকিন।
এর আগের রুবলের দরপতনের জন্য বাণিজ্য ভারসাম্য পরিবর্তনকে দায়ী করেছিল ব্যাংক অব রাশিয়া এবং অর্থ মন্ত্রণালয়।
ওরেশকিনের মতে, নিয়ন্ত্রকের আর্থিক নীতির কারণেই মূলত রুবলের পতন ঘটেছে।
নীতিনির্ধারকদের কাছে ভবিষ্যতে মুদ্রার মান স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণই রয়েছে।
এসইবি এবি-এর চিফ ইমার্জিং বাজার কৌশলবিদ এরিক মেয়ারসন জানান,
রাশিয়ার অর্থনীতিতে চারপাশ থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলোর চাপের প্রভাবে মান হারাচ্ছে রুবল।
কেউ রুবল ধরে রাখতে চায় না। এদিকে রফতানিকারকরা রুশ মুদ্রাবাজারে সীমিত পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করছেন, যা রুবলের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
ক্রমবর্ধমান আমদানি এবং সেই তুলনায় কম রফতানি আয়ের ফলে চলতি হিসাব দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা আরও চাপ বাড়াচ্ছে।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে,
জুলাই মাসে তেল ও গ্যাস রফতানি করে ৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রুশ রফতানিকারকরা,
যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।