দৈনন্দিন জীবনে মানুষের ফেলে দেয়া একটি আবর্জনা মাছের আঁশ।
তবে হিলিতে সেই মাছের আঁশ রোদে শুকিয়ে তা শুকনো আঁশ হিসেবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
এই ফেলে দেয়া আঁশ বিক্রি করেই বাড়তি আয় করছেন সীমান্তবর্তী উপজেলার নারী-পুরুষরা।
সীমান্তবর্তী এ উপজেলার মাছের বাজারগুলোর সরেজমিন চিত্র বলছে,
মাছ বিক্রির পাশাপাশি মানুষের কেনা মাছ কেটে দিয়ে সামান্য কিছু অর্থ আয় করেন মাছ কাটার শ্রমিকরা।
তা দিয়েই তাদের সংসার চলে।
বছরের পর বছর এসব মাছের আঁশ আবর্জনা হিসেবে ডাস্টবিনে ফেলে দিতেন তারা।
তারা আঁশ আবর্জনা বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা করছেন।
হাকিমপুর পৌর এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ৩০টি পরিবার এই মাছের আঁশ সংগ্রহ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
তাদের দাবি, সরকার তাদের দিকে বিশেষ নজর দিলে তারা সরাসরি প্রকৃত ক্রেতার কাছে মাছের আঁশগুলো বিক্রি করতে পারবেন।
এমনই এক মাছ ব্যবসায়ী দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার মামুন মিয়া।
বাবার সঙ্গে স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রি করেন তিনি।
পাশাপাশি তিনি মাছ কাটার শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন।
যা করে তিনি ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি কিছু টাকা পান।
পরে বাজারে কাটা এসব মাছের আঁশ ফেলে না দিয়ে তা বাড়িতে নিয়ে যান তিনি।
এরপর তার পরিবারের নারী সদস্যরা দিনের পর দিন এসব মাছের আঁশ রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
মাছ ব্যবসায়ী মামুনের মা রুবিনা বেগম বলেন,
‘আগে তো এসব আঁশ আমরা ফেলে দিতাম।
এখন দেখি অনেকে এটি সংরক্ষণ করছে।
তাই আমরাও এখন মাছের আঁশ শুকিয়ে তা বিক্রি করছি।
এই টাকা আমার ব্যক্তিগত ও সংসারের কাজে লাগছে।
মামুনের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন,
‘সংসারের কাজ শেষে আগে বসে থাকতাম।
তবে এখন আঁশ নিয়ে কাজ করি।
বাড়িতে শুকানো মাছের আঁশ বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায়,
সেটি আমার স্বামী আমাকেই দিয়ে দেয়।
তার বাড়ির টিনের চালা কিংবা ঘরের বারান্দা সব জায়গায়ই শুকনো মাছের আঁশে ভরপুর।
এতে তার পরিবারে অতিরিক্ত মুনাফা যুক্ত হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী মামুন মিয়া বলেন,
‘প্রতিদিন বাজারে মাছ কেটে বিক্রি করার সময় আঁশগুলো যত্ন করে রাখি।
দিনশেষে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার মতো অনেকেই এই কাজে জড়িত।
ঢাকা থেকে পাইকার এসে এসব শুকনো মাছের আঁশ কিনে নিয়ে যায়।
এটি আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করা মাছের আঁশ সংগ্রহ করে বিদেশে রফতানির কথা ভাবছেন।
এতে এই কাজের সঙ্গে জড়িতরা যেমন ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি দেশে আসবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা।
স্থানীয় রফতানিকারক শাহীনুর রেজা শাহিন বলেন,
‘মাছের আঁশ কিনে আমরা নিজেরাই বিদেশে রফতানি করার কথা ভাবছি।
এতে আমাদের অঞ্চলের নারীরা যেমন ন্যায্যমূল্য পাবেন, তেমনি আমরাও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।
এতে আমাদের দেশে ডলার সংকট অনেকাংশে কমে যাবে।’
বিদেশে আঁশ রফতানি করেন রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে চীনে আঁশ রফতানি হয়।
সেখানে মাছের আঁশ থেকে কোলাজেন ও জিলেটিন তৈরি করা হয়।
ওষুধ, প্রসাধন সামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে মাছের আঁশ ব্যবহৃত হয়।