চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে নিরাপদে শস্য রফতানির চুক্তি থেকে সরে আসে রাশিয়া। এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক গম বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সিএনএনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবশেষে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কমছে।
কিন্তু চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে শিগগিরই সারা বিশ্বে খাদ্যের দাম কমছে না। উল্টো এর জন্য খাদ্য আরও ব্যয়বহুল হতে চলেছে।
গত সোমবার (১৭ জুলাই) ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে নিরাপদে শস্য রফতানির চুক্তি থেকে মস্কো সরে এসেছে।
এতে বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যে চড়া খাদ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।
কারণ,
ইউক্রেন থেকে গম রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে, বিশ্ববাজারে গমের সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এই শঙ্কায় শস্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী।
বুধবার (১৯ জুলাই) বিশ্ববাজারে গমের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে। আর এই দাম বিগত তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর পথে রয়েছে।
কেননা,
রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তে ইউরোপজুড়ে অস্থিরতা বাড়ছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
বুধবার ইউরোপীয় স্টক এক্সচেঞ্জে গমের দাম আগের দিনের তুলনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে প্রতি টন ২৫৩ দশমিক ৭৫ ইউরো হয়েছে, যেখানে ভুট্টার দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
ট্রেডিং ইকোনমিকসের বরাতে গার্ডিয়ান জানিয়েছে,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে গমের দাম টানা তিন দিন ধরে বেড়ে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) প্রতি বুশেল গম ৭ দশমিক ৩ ডলারে পৌঁছেছে, যা গত তিন সপ্তাহে সর্বোচ্চ।
পাশাপাশি মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) ভুট্টার দামও প্রায় ২ শতাংশ বেশি ছিল। কারণ, ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকটের শঙ্কা করছেন।
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমানোর জন্য এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কারণ,
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্য বাড়তে থাকে।
এদিকে এক বিবৃতিতে ইউএস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাডাম হজ বলেছেন,
‘ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ’ চুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও খারাপ করবে।
এতে যদিও আমদানিকারকরা আশা করছিলেন রাশিয়া চুক্তিটিতে পুনরায় ফিরে আসবে।
কিন্তু তাদের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়ে বুধবার দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
যার কারণেই কৃষ্ণ সাগরজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ এই পণ্য রফতানি চুক্তি আবারও শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের মার্চে গমের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায়।
বর্তমানে এর দাম সেই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশেরও বেশি কম রয়েছে।
মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর গত বছরের মাঝামাঝিতে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে নিরাপদে শস্য রফতানির কৃষ্ণ সাগর চুক্তি হয়।
তিন দফায় বাড়ানোর পর গত সোমবার (১৭ জুলাই) এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। আর রাশিয়া রাজি না হওয়ায় এই চুক্তি নবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে,
এ পর্যন্ত এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন খাদ্য রফতানি করা গেছে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট তথ্য বলছে,
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর আগে ইউক্রেন বিশ্বের ৫ম শীর্ষ গম রফতানিকারক ছিল।
বিশ্বব্যাপী মোট গম রফতানির ১০ শতাংশই ছিল দেশটির দখলে।