যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা ছাড়াও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বছরের যে চার মাসকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন, মহররম তার অন্যতম।
এটি হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। এ মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়।
জাহেলি যুগে প্রাচীন আরবদের মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হতো এ দিনটি।
আশুরার দিন মক্কার মানুষ রোজা রাখতেন এবং কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তন করতেন।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদিন রোজা রাখতেন এবং অন্যদের রোজা রাখার উৎসাহ ও নির্দেশ দিতেন।
এছাড়া রমজানের রোজার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল।
রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজাকে মোস্তাহাব পর্যায়ের ঐচ্ছিক ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়।
আশুরাকে কেন্দ্র করে দুই রোজা ও তওবার আমল শরীয়তসম্মত।
এর বাইরে সমাজে কারও কারও মাঝে কিছু আমলের প্রচলন হয়েছে, যা ইসলামসম্মত নয়।
এগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত। এমন কিছু আমল হলো:
আশুরার গুরুত্ব ও ফজিলত বয়ান করার জন্য মিথ্যা ও জাল হাদিস বর্ণনা করা।
কারণ হাদিসে মিথ্যা হাদিস বর্ণনাকারীকে জাহান্নামী বলা হয়েছে।
তাজিয়া বানানো অর্থাৎ হজরত হুসাইন (রা.)-এর নকল কবর বানানো।
তাজিয়ার সামনে যে সমস্ত নযর-নিয়ায পেশ করা হয়,
তা গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে) নামে উৎসর্গ করা হয় বিধায় তা খাওয়া হারাম।
তাজিয়ার সঙ্গে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো।
তাজিয়ার দর্শনকে ‘জিয়ারত’ বলে আখ্যা দেয়া এবং এতে নানা রকমের পতাকা ও ব্যানার টাঙিয়ে মিছিল করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম।
এছাড়াও আরো অনেক কুপ্রথা ও গর্হিত কাজের সমষ্টি হচ্ছে এ তাজিয়া।
শোক প্রকাশ করার জন্য কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরিধান করা।
মর্সিয়া বা শোকগাথা পাঠ করা, এর জন্য মজলিস করা এবং তাতে অংশ নেয়া সবই নাজায়েজ।
আশুরার দিনে শোক পালন করা।
কেননা, শরিয়ত শুধুমাত্র স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীর জন্য ৪ মাস ১০ দিন আর বিধবা গর্ভবতীর জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ ৩ দিন শোক পালনের অনুমতি দিয়েছে।
এ সময়ের পর শোক পালন করার জায়েজ নেই। আর উল্লেখিত শোক পালন এগুলোর কোনটার মধ্যে পড়ে না।
‘হায় হুসেন’,
‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা;
যারা এগুলো করেন, দেখেন এবং শোনেন সবার প্রতি নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
কারবালার শহীদরা পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন,
তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এদিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো।